প্রবন্ধসাহিত্য

কবিতা লেখার আগে

খোকার দীর্ঘনিদ্রায় শঙ্কিত মাকে মনে রেখে

খোকা ঘুমিয়ে পড়ে
জোছনায়,
জানালার পাশে;
রাতপরিদের নাচে রঙিন
তার চোখের পাতা
অগ্নিমুখো ফড়িঙের মতো কাঁপে

ফের জোছনায়
রাত্রিকে চেপে,
শুইয়ে রেখে
জানালার পাশে
পৃথিবীর প্রতি জেগে উঠবে ঘুমন্ত খোকাটি?

একটি কবিতা লেখা হয়ে যাওয়ার পরে তার নেপথ্যগল্প কি সবসময় হুবহু বলা যায়? কখনো বলা যায়, কখনো যায় না—কারণ কোনো কোনো কবিতার আড়ালে গল্প ও নানা ঘটনাসূত্র থাকলেও সব কবিতার তা থাকে না। আবার, যে-কবিতার আড়ালে কোনো গল্প থাকে, তা বলতে গেলেও সাবধান থাকতে হয়, না হলে কবিতালেখার আগের গল্পের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারে কবিতালেখার পরের গল্পটিও। দেখা যায়, উৎসগল্প যাই থাক, অনেক সময় তাকে ছাড়িয়ে লিখিত কবিতাটি বলতে শুরু করে অন্য আরেকটি গল্প। ‘খোকার দীর্ঘনিদ্রায় শঙ্কিত মাকে মনে রেখে’ কবিতাটি—আমার ধারণা—সেরকমই একটি বিজড়িত কবিতা। বাৎসল্যকাতর পিতার লেখা মাতৃভাবের এ-কবিতাটি তো প্রথমেই পড়লাম, এখন পড়ে দেখতে পারি তার কী ছিল তার আড়ালের গল্পটি।

২০০৬ থেকে ২০১৬ সালে পর্যন্ত যে-ফ্ল্যাটে থেকেছি তার পড়ার ঘর থেকে ডানদিকের জানালার বাইরে তাকালে দেখা যেত অন্ত্যজ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত শেষকৃত্যস্থল আর একটু উঁচুতে টিলার ওপরে আরেকটি গোরস্তান। এর আদিনাম নরসিং টিলা, এখন চৌধারী টিলা, তবে সেখানকার ক্রিয়াকৃত্যের কারণে এখন সেটি মরাটিলা বলেও পরিচিত। ফ্ল্যাটের পেছন দিকের জানালাটি ছাড়া সবকটি জানালাই কিছুটা আড়াআড়ি, বলা যায় আড়জানালা। আমি সেই জানালার মাপে ব্যাগ ও কাগজপত্র রাখার জন্য একটি বাক্স বানিয়ে দেখি সেটি অনেকটাই একটি কালো কফিনের রূপ নিয়েছে। এরপর, মাঝে মাঝে, মধ্যরাতে সেই কফিনের ওপর বসে শ্মশান কিংবা গোরস্তানের দিকে যখন তাকাই তখন অন্যরকম শিহরন অনুভব করি।

পড়ার ঘরে চারদিক-ঘেরা বইয়ের শেলফের বাইরে একটি কম্পিউটার-টেবিল আর একটি ছোটো চেয়ার, এছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। আমি পড়ালেখা যাই করি এই কফিনে বসে, নয়ত মাটিতে পা মুড়ে নিয়ে, বই-কাগজ কফিনের ওপর রেখে; তাই এখানে যতক্ষণ থাকি ততক্ষণই এরকমই মনে হয় যে, এই ঘরে রয়েছে একটি কালো কফিন যেখানে বসে বাইরে তাকালেই একটি শ্মশানভূমি এবং গোরস্তান। আমি ও আমার গৃহসঙ্গী আমরা কেউ কাউকে ভয় পাইয়ে দিতে চাই না বলেই হয়ত এ-নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলি না, তবে একদিন অসাবধানতাবশত বলে ফেলেন যে, কবরে লাশ শুইয়ে দেওয়ার পরে গর্ত ঢাকবার সময় বাঁশের খুঁটি নাড়া-চাড়া-করার যে-খটখট শব্দ হয়, এখানে প্রায়-রাতেই নাকি সেরকম শোনা যায়। এই সবকিছুর মধ্যেই ২০০৮ সালের ১০ জুলাই আমার ছেলে মসনবির জন্ম।

প্রিয় বই থাকলে দিনরাত ঘরে পড়ে থাকতে কোনো আপত্তি নেই আমার। ছোটোবেলায় কোনো আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বুক-শেলফে কোনো কাঙ্ক্ষিত বই দেখতে পেলে সেটি আনতে না-পারলে বই পড়ার লোভে রাতে সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করত। সেই আমার, একসময়, মাঝে মাঝে ঘরের-বাইর-হওয়ার বাতিক তৈরি হয়ে গেল।

অধিকাংশ সময়ই আমার এই ঘরে কাটে বলে মাঝে মাঝে ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে ছোটো মশারি টাঙিয়ে তার মা তাকে আমার পাশে রেখে যান। একদিন পাশে ছেলে ঘুমন্ত, পূর্ণিমারাতে জোছনা পড়ছে আড়জানালা চুয়ে, আমি চেয়ে দেখি তার চোখের পাতা একটু একটু কাঁপছে-মনে হয় ঘুমের দেশের লাল-নীল পরিরা যেন তাকে ঘিরে ধরেছে। দেখে প্রথমেই তার মায়ের কথাই মনে পড়ল, যিনি ছেলেকে যত্নে বড়ো করে তুলবেন বলে সদ্য চাকরি ছেড়েছেন। এরপর, হঠাৎ কেন এই চিন্তাটাই আমার মাথায় এল বুঝতে পারলাম না-ঘুমন্ত ছেলের দিকে তাকিয়ে কখনো কোনো মায়ের কি এমন শংকাবিহ্বল চিন্তা হয় যে-ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের দেশে হারিয়ে-যাওয়া খোকাটি যদি আর বাস্তব জগতে ফিরে না আসে?

নিঃসন্দেহে এ এক অলক্ষুনে এবং অবশ্যই অতিচিন্তা-এই কারণেই হয়ত কবিতায় এই ভাবনাটুকু আরও একটি আলোকসম্ভাবী অণুগল্পের ইশারা নিয়ে আসে আর মূল গল্পটি কিছুটা আচ্ছন্ন হয়ে যায়।


সেই ছোট্টো খোকাটিই পড়ে লায়েক হয়ে তার মায়ের সঙ্গে ঢুকে পড়ল অন্য আরেকটি কবিতায়। সেই কবিতার নাম ‘গৃহী মুসাফির’। সে আরেক গল্প।

স্বভাবত ঘরকুনো আমি, ভ্রমণপ্রিয় ছিলাম না কোনোদিন, আজও নই। প্রিয় বই থাকলে দিনরাত ঘরে পড়ে থাকতে কোনো আপত্তি নেই আমার। ছোটোবেলায় কোনো আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বুক-শেলফে কোনো কাঙ্ক্ষিত বই দেখতে পেলে সেটি আনতে না-পারলে বই পড়ার লোভে রাতে সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করত। সেই আমার, একসময়, মাঝে মাঝে ঘরের-বাইর-হওয়ার বাতিক তৈরি হয়ে গেল। সে-সময় যখনই ঘর থেকে বের হতাম, ব্যাগে থাকত অতিরিক্ত একটি কাপড়। শেখ লুৎফর, আহমদ মিনহাজ, টি এম আহমেদ কায়সার, নাজমুল হক নাজু, হাবিবুর রহমান এনার এবং মঞ্জু রহমান লেবুর মনে পড়বার কথা, সেই সময়ের মধ্যেই আমরা গিয়েছি দূর পনাতীর্থে; বাউল মকদ্দস আলম উদাসীকে নিয়ে কামারগাঁওয়ে ছাবাল শাহের বাড়িতে, প্রণবেশ দাশকে নিয়ে কামাল উদ্দিনের ভাটিপাড়ায়, কায়সার এনার আর লেবুসহ শাহ আবদুল করিমের উজানধলে, আর দুর্ব্বীন শাহর ওরসে নানা সময়ে, নানাজনকে নিয়ে।

এই বাতিক রয়ে গেল সংসারে জড়িয়ে পড়ার পরেও। কিন্তু তাতেও কোনো বাধা আসেনি। বিয়ের আগে আগে ঈষৎ সংকোচের সঙ্গে একদিন আমার এই বাতিকের কথা ভবিষ্যৎ-সঙ্গীকে জানালে তিনি মোলায়েম স্বরে বললেন, ‘কোথাও যাওয়ার আগে শুধু বলে যেও কোথায় যাচ্ছ।’

বিয়ের পরেও প্রথম প্রথম ছুটিছাটায় এদিক-ওদিক নানারকম ঘরোয়া আসরে গিয়েছি, কিন্তু ধীরে ধীরে চাকরিবাকরিসহ আরও নানা জঞ্জালে এমনভাবে জড়িয়ে যাই যে, দেখি আর ঘর থেকে বের হওয়াই যায় না। যিনি আগে বলেছিলেন, কোথাও যেতে চাইলে তার পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসবে না, এখনো তিনি সে-কথাই বলেন, তবু কখনো কখনো বের হলেও আর আগের মতো যেতে পারি না কোথাও। না, কোনো বাধা নেই, তবু কী এক প্রতিবন্ধ যেন আটকে রেখে দেয়। হয়ত একেই বলে বিনিসুতার বাঁধা/বাধা : ধরতে যাও, কাটতে যাও, কিছুই পাবে না, কিন্তু প্রতিবন্ধ কিছু একটা আছে কোথাও।

‘নাইওর’ শব্দটি শুনলে আমি আজও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, বোনের কথা মনে পড়ে আর তার শ্বশুরবাড়িতে চলে যাই। মনে পড়ে শচীন দেব বর্মণ আর উকিল মুনশির সেই আকুল-করা গানের কথা; মনে পড়ে সহপাঠী বাউলশিল্পী আব্দুস সালামের মুখে শোনা নাইওরের উল্লেখ করে মৃত্যু-বিষয়ে দুর্ব্বীন শাহ আর সাত্তার মিয়ার হেঁয়ালিময় গল্পের কথা।

এখন ছেলেও বড়ো হচ্ছে, কোথাও সফর করতে গেলে সেও মাঝে মাঝে সঙ্গী হতে চায় বটে, কিন্তু একা যেতে গেলে কোনো বাধা দেয় না। তবু যেতে পারি না আমি, কেন পারি না তাও জানি না। তাই বলে সেইসব পুরোনো গল্পগাছা তো আর থেমে থাকে না। মাঝেমাধ্যে সর্বক্ষণ দা হাতে নিয়ে চলা কামাল উদ্দিনের ভাগনির জামাই জালাল ফকিরের কথা বলি যার ঝোলায় দীর্ঘদিন বন্দি হয়ে ছটফট করেছে কামাল উদ্দিনের গানের পাণ্ডুলিপির অমুদ্রিত হরফগুলি। বলি রহমত উল্লাহ আর আজর আলির পাণ্ডুলিপির কথা। এইসব শুনে একদিন ছেলের মা বলেন : ‘এখন আর যাও না কেন?’

কিন্তু যেতে পারি না কোথাও আমি, কেন পারি না তা বলা মুশকিল-তবু এইসব নিয়ে একদিন লেখা হয়ে যায় ‘গৃহী মুসাফির’ কবিতাটি। লেখা হয়ে গেলে খেয়াল করি, কোথাও যাওয়ার সময় কেউ কোনো বাধা না দিলেও কারও-না-কারও প্রতি একপ্রকার অনুযোগ ও অভিমান ব্যক্ত হয়ে গেছে কবিতায়। আর আমিও কেন জানি না স্বার্থপরের মতো সেই অর্ধসত্য-অর্ধমিথ্যা কবিতাটিকে, কোনো-একটি বইয়ের শেষ দিকে হলেও, জায়গা না দিয়ে পারি না।

গৃহী মুসাফির

ঘরেই রয়েছি তবু, পথিকপথিক গন্ধ গেল না আমার : তিরি ও পুত্রের কাছে আমি তাই আজও মুসাফির-যে-জন অছিলা পেলে যেতে পারে দূর বৈদেশে

আমার কি আগেও ছিল বাউলের বেশ? দেখার হাওরে গিয়ে যে-নারীর হৃদয় পেয়েছি, সেও তবে আড়চোখে আমাকে দেখেছে!

রাতে ও বিরেতে হঠাৎ ঘরছাড়া হয়েছি যে ডাহুকীর ডাকে, সেই দোষে আজও আমি পথিকপথিক-তিরি ও পুত্রের কাছে দু-দিনের গৃহী মুসাফির


বাস্তব জীবনে কোথাও যেতে না পারার জগৎ-জঞ্জালের কথা ‘গৃহী মুসাফির’ কবিতায় বলা হলেও ‘নাইওর’ কবিতায়, প্রকাশ্যে, তা-ও সময় উল্লেখ করে, কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত হয়েছে স্পষ্টভাবেই। কবিতাটি পড়ার আগে তার আড়ালের গল্পটি আগে পড়ে দেখা যেতে পারে।

‘নাইওর’ শব্দটি শুনলে আমি আজও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, বোনের কথা মনে পড়ে আর তার শ্বশুরবাড়িতে চলে যাই। মনে পড়ে শচীন দেব বর্মণ আর উকিল মুনশির সেই আকুল-করা গানের কথা; মনে পড়ে সহপাঠী বাউলশিল্পী আব্দুস সালামের মুখে শোনা নাইওরের উল্লেখ করে মৃত্যু-বিষয়ে দুর্ব্বীন শাহ আর সাত্তার মিয়ার হেঁয়ালিময় গল্পের কথা।

আমার মেজ বোনের বিয়ের আগে আমাদের এক রসিক চাচাতো ভাই প্রায় বলতেন, ‘তোরে এমন জায়গাত বিয়া দিমু যেন ই দেশর কাউয়া চিলরেও না দেখছ্।’ বোনের যখন বিয়ে হয় তাতে সেই চাচাতো ভাইয়ের কোনো হাত ছিল না, কিন্তু তার বিয়ে হয় সেই সময়ের এক অজপাড়াগাঁয়। এ-অঞ্চলের কাউয়া-চিল সে-অঞ্চলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বিয়ের দু-তিনদিন পর বড়োভাইয়ের সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখি এ এক অন্য জগৎ : অধিকাংশ বাড়িঘর শনের, বাজারের দোকানপাট শনে-টিনে তৈরি এবং নড়বড়ে; মানুষের আর্থিক অবস্থা, কথাবার্তার ধরন সবই অন্যরকম। এমনিতে দুলাভাই দেখতে সুশ্রী, শিক্ষিত, দেশের কী এক প্রকল্পের কাজে বিদেশে থাকেন। সমস্যা তৈরি হলো বিয়ের কিছুদিন বাদে, বোনকে তার বিশাল একান্নবর্তী পরিবারে রেখে বিদেশে চলে যাওয়ার পর। এদিকে আমার বড়ো দুই ভাই একসঙ্গে দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় পরিবারের একমাত্র পুরুষ এই বেবুঝ আমার ওপর পড়ল নাইওর আনা-নেওয়ার কঠিন দায়িত্ব।

গেরস্তবাড়ির বউয়েরা সাধারণত অঘ্রানী ও বৈশাখী ধান তোলার পরে বাপের বাড়ি নাইওর যায়, পিঠা-চিড়া খায়, এবং আসার সময়ে একখান শাড়িও নিয়ে আসে। আর এ দীনজনের কবিতায় রয়েছে : যখন ঘরে নিদান হবে, ঘোর সংকটের কালে আগন ও বৈশাখের আগে কার্তিক ও চৈত্র মাসে যেন নাইওর নিয়ে যায়।

দায়িত্বটা কঠিন না শুধু, জটিলও। আমার তালুই ছিলেন একদমই সহজসরল, আর মাঐ সেই শ্রীরাধার শাশুড়ীর মতো ছিলেন না সত্য, কিন্তু যতদিনই মায়ের পক্ষ ধরে বোনকে নিয়ে আসার জন্য তার কাছে আবদার করতে গেছি, আমার মনে হতো, মা যেন তার শত্রুপক্ষের বা সতিনগোছের কেউ। না, নিজে সরাসরি কোনো আপত্তি করতেন না, বলতেন, ‘তোমার তালুইয়ের কাছে যাও রে বাবা, দেখো তাইন কিতা কইন।’ তালুই একদম নিজের ঢঙে জোরে জেরে দিনের অধিকাংশ সময় বড়ো হরফের এক জিল্দ কোরান শরিফ হাতে নিয়ে তেলাওয়াত করে যেতেন—আমি এই অবস্থায়ই তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াতাম, কিন্তু আমার ভালোভাবে কিছু বলার আগেই তিনি সম্মতি দিয়ে ফের মাঐ-এর কাছে পাঠিয়ে দিতে চাইতেন। এভাবে প্রতিবারই আমার আবদারের প্রথম দফা ব্যর্থ হতো আর মনে পড়ত নাইওর নিয়ে আসার জন্য মাকে লেখা বোনের অশ্রুভেজা দীর্ঘ চিঠির কথা। বিয়ে খেলাধুলায় আর গল্পবইয়ে প্রায়-সারাক্ষণ বুঁদ থাকতেন বলেই হয়ত আমাদের এই বোন ক্লাসের পড়ালেখায় ছিলেন সবচেয়ে অমনোযোগী, কিন্তু হাতের লেখা মুক্তোর মতো এবং সকলের চেয়ে সুন্দর। এই মুক্তাক্ষরে লেখা চিঠিতে থাকত একান্নবতী পরিবারের নানা জটিলতার কথা, অসুখবিসুখের কথা- অশান্তির কথা। এইসব অশান্তি থেকে নাইওর নিয়ে ক-দিনের জন্য তাকে উদ্ধার করার জন্যই না আমি এসেছি।

কিন্তু আমার এ-চেষ্টা কি শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যাবে?

ততক্ষণে বোনের অন্য দুই জা উৎকর্ণ হয়ে এ-দিক ওদিক ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন। তারা বোঝেন, সচ্ছল-সম্পন্ন পরিবারে আরাম-আয়েশে বেড়ে-ওঠা ছোটো জার এখানে কষ্ট হয়। অবস্থার বেগতিক দেখে তালুইও ছোটোবউকে নাইওর পাঠানোর পক্ষে আমতা-আমতা করছেন, এতে মাঐ বিরক্ত হন, তবে এই ভাবে শেষমেশ নাইওরি নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।

এই সব অভিজ্ঞতার সঙ্গে এসে মিশেছে শচীন দেব বর্মণের গাওয়া ভাটি-অঞ্চলে বিয়ে-হওয়া বোনের সেই কণ্ঠের আকুতি : ‘ও মাঝি রে ভাটির গাঙ বাইয়া/আমার ভাইজানরে কইও নাইওর নিত আইয়া।’ তার সঙ্গে মিশেছে উকিল মুনশির সেই অমর গানটিও : ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে পুবালি বাতাসে/বাদাম দেইখা চাইয়া দেখি আমারনি কেউ আসে রে ॥

কবিতাটি লেখার সময় এইসব স্মৃতি এসে ভিড় করেছে মাথায়, অথবা হতে পারে এইসব স্মৃতিই ঠেলে দিয়েছে এই পঙ্ক্তিগুলোর দিকে। তবে এতে বক্তব্যের পার্থক্য হলো এই, গেরস্তবাড়ির বউয়েরা সাধারণত অঘ্রানী ও বৈশাখী ধান তোলার পরে বাপের বাড়ি নাইওর যায়, পিঠা-চিড়া খায়, এবং আসার সময়ে একখান শাড়িও নিয়ে আসে। আর এ দীনজনের কবিতায় রয়েছে : যখন ঘরে নিদান হবে, ঘোর সংকটের কালে আগন ও বৈশাখের আগে কার্তিক ও চৈত্র মাসে যেন নাইওর নিয়ে যায়।

নাইওর

আমাকে নাইওর নিও আগনের আগে

এখন ধানের গন্ধে মনে লাগে ভয়, এখন ধানের শব্দ, বুকে কেউ চিড়া-বারা কোটে; ধানের উয়ানি দেখে চোখে লাগে ধুলোবালিকাচ

আমাকে নাইওর নিও কালবোশেখেরও আগে। এখন ভীষণ লাগে ঝড়-ঝঞ্ঝা, মারি ও মড়ক। আউলা বাতাসে আগে উড়েছি যে বিজুলিরও আগে, মৃদুমন্দ বাওয়ে আজ কেঁপে ওঠে বুকের পাঁজর

আমাকে নাইওর নিও নিদানের কালে : চৈতে ও কার্তিকে; আগনের-বোশেখেরও আগে


উপরের কবিতাটি যার কাছে যেভাবেই গৃহীত হোক, নিদানকাল যে সময়-সংকটের কথা বলছে তা যেকোনো পাঠকের কাছে তা ধরা পড়বেই। এভাবে সময় নানা ভাবেই ঘুরে ফিরে এসেছে আমার কবিতায়। ‘আজ’ কবিতাটি সেরকমেরই একটি কবিতা।

এটি লিখেছি বহু আগে, কিন্ত আমার কাছে এখনো সমকালিক। শিরোনাম ‘আজ’ বলেই যে এই সমকালীনতা তা নয়, এর বাস্তবতা এখন তো তীব্রই, অবস্থার যে-ভাবগতিক লক্ষ করছি, ভবিষ্যতে তা আরও সাম্প্রতিক হয়ে উঠবে।

এখন যা হওয়ার বা ঘটবার কথা না, সেরকম কত কিছুই যেন আরও বেশি বেশি হচ্ছে আজ। ভারতচন্দ্র লিখেছিলেন ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?’ এখন তার জবার দেওয়ার সময় হয়েছে, হে গুণাকর, এখন নগর পুড়লে অতি অবশ্যই দেবালয় এড়ায়, কারণ এখন ‘সব সম্ভবের কাল’, এখন কাউকেই, কোনোকিছুকেই আর অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে মরতে হয় না।

শাড়িপরা শরীর পুড়ে গেলে শাড়ি যেমন না পুড়ে থাকতে পারে না, তেমনি নগর পুড়ে গেলে দেবালয়েরও তো পুড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু না, এখন, আজ, সবকিছুই সম্ভব! ‘আজ’ কবিতায় ভারতচন্দ্রের এই উল্লিখনটুকু আসলে তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিরাপদ শিকারের চেষ্টা।

মাত্র দুই পঙ্ক্তির এ-কবিতা, তাও লেখা হতো না যদি ওই বাক্যটি ভারতচন্দ্র না লিখতেন আর সে-বাক্যটি দীর্ঘদিন তাড়া না-করত। প্রথম পঙ্ক্তির শেষে একটি বিস্ময় চিহ্ন দিয়েছিলাম, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তীব্র বাস্তবতার কারণে এখন মনে হচ্ছে তা না দিলেও চলত। পঙ্ক্তিনিহিত ভিন্ন অর্থের কথা বাদ দিয়ে শুধু তার অক্ষরার্থ মনে রেখেও বলা যায়, এখন সবকিছু শেষ হয়ে যেতে পারে কিন্তু এই পেটমোটা শূন্যগর্ভ দেবালয় ঠিকই টিকে থাকবে।

অথচ এরকমটি হওয়ার কথা ছিল না। শাড়িপরা শরীর পুড়ে গেলে শাড়ি যেমন না পুড়ে থাকতে পারে না, তেমনি নগর পুড়ে গেলে দেবালয়েরও তো পুড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু না, এখন, আজ, সবকিছুই সম্ভব!

‘আজ’ কবিতায় ভারতচন্দ্রের এই উল্লিখনটুকু আসলে তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিরাপদ শিকারের চেষ্টা। এখনকার দৃশ্যপটের দিকে তাকিয়ে, প্রথমেই, প্রবচনে-পরিণত-হওয়া সেই বাক্যের কথা মনে পড়ায়ই-না এই দুটি পঙ্ক্তি মাথায় এল।

আজ

নগর পুড়ছে, তারপরও দেবালয় বেঁচে গেল দেখি!

শরীর পোড়ার পর যেরকম রয়ে যায় শরীরের শাড়ি


‘ব্যঘ্রকাল’ কবিতায়ও রয়েছে সময়ের করুণ চিত্র, কিন্তু তার পেছনে রয়েছে চার দশক আগের স্মৃতি।

আমাদের পাশের গ্রামে একটি মাজার দেখে আসছি সেই ছোটোবেলা থেকেই। সেই মাজারে নাকি মাঝে মাঝে গভীর রাতে একটি বাঘ আসে এবং কারো ক্ষতি না-করে শুধু প্রণাম করেই চলে যায়। ছোটোবেলায় সেই মাজারটি দেখলেই ওই না-দেখা বাঘটির কথা মনে পড়ত। আজও মনে পড়ে।

এই তথ্যের প্রভাবেই কি না জানি না, শৈশবে আরও একবার অদ্ভুত বাঘের কথা শুনে শিহরিত হয়েছিলাম। মায়ের সঙ্গে মেল-ট্রেনে করে ঢাকায় যাচ্ছি, হঠাৎ মধ্যরাতে কেন জানি একজায়গায় এসে গাড়ি থেমে যায়। সময় যাচ্ছে, ট্রেন ছাড়ছে না, অনেকেই অনেক কথা বলছেন, পাশেই একটি মাজার না মসজিদ ছিল মনে পড়ছে না, তবে আলো-আঁধারিতে কেউ একজন বলছিল, এই মসজিদে নাকি প্রায়ই একটি বাঘ নামাজ পড়তে আসে!

আজ থেকে চার দশক আগে এই কথাটি সত্যি সত্যি শুনেছি নাকি সেই শৈশবের মাজারকাহিনির প্রভাবে স্বপ্নে সেই স্বর শুনেছিলাম তা আজ মনে করা কঠিন। হয়ত এই দীর্ঘস্থায়ী ঘোর থেকে বের হয়ে আসার জন্য এক-বৈঠকে লিখেছিলাম ‘ব্যঘ্রকাল’ কবিতাটি। লোকশ্রুতির পাশাপাশি পথে-পড়া বাঘের ছায়ার গর্জন, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এবং মুখ বুজে জেগে-জেগে-ঘুমানোর বর্ণনা যদি এখনকার কোনো ভয়ঙ্কর অবস্থাকে নির্দেশ না করে তো কবিতাটি বৃথা।

ব্যঘ্রকাল

বাঘও নীরবে আসে, ধীরে ও নির্জনে-রাতের মোকামে-মাজার-প্রণামে; তবু শুনি পথে-পড়া ছায়াটি গর্জায়-এই তথ্যে চারদিকে ভীতিকর চাপা গুঞ্জরন

মুখ বুজে, জেগে-জেগে সবাই ঘুমায়!


কবিতা পড়ার এবং মাঝে মাঝে কবিতালেখার সামান্য অভিজ্ঞতার পরে এখন মনে হয়, যে-কবিতাগুলির সঙ্গে নানা সময়ের স্মৃতি-অনুষঙ্গ জড়িত সেই কবিতাগুলিই আমাদের আকৃষ্ট করে বেশি। সেই স্মৃতি হতে পারে বাস্তব জীবনের বা হতে পারে অন্য অভিজ্ঞতারও, তা কোনোভাবে যুক্ত হয়ে গেলে কবিতাকে নানা কারণে স্মরণযোগ্য করে তোলে। ‘ব্যঘ্রকাল’ কবিতায় যেমন আছে শৈশবের বাস্তবের অভিজ্ঞতা, তেমনি ‘আয়শা’ কবিতাটির নেপথ্যে রয়েছে অধীত স্মৃতির নিরন্তর তাড়না। যারা হজরতের স্ত্রী আয়শার জীবনী বা মোস্তালিক অভিযানের কথা পড়েছেন তারা জানেন আয়শার জীবনে এমনি-এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যা তার জীবনকে শুধু বিমর্ষ ও বিপন্ন করেছিল।

মোস্তালিক অভিযান থেকে রাতের বেলা মদিনায় ফেরার পথে একজায়গায় এসে হজরতের আদেশে সবাই কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেন। বিশ্রাম শেষে সবাই যখন আবার যাত্রা শুরু করলেন তখন আয়শা তাঁবুর বাইরে ছিলেন কারণ তার গলার হার হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি ফিরে এসে দেখলেন সবাই চলে গেছেন, তাই কোনো উপায়ান্তর না দেখে চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর হজরতের সঙ্গীদের একজন সাফওয়ান বিন আল মুআত্তাল সেখানে এলেন এবং তাঁকে এখানে দেখে বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, ‘হজরতের সওয়ারি দেখি এখানে?’ কিন্তু তার কথার কোনো উত্তর দিলেন না হজরত আয়শা। তবে সাফওয়ান যখন একটি উট নিয়ে এসে তাতে চড়ে ফেরার কথা বললেন তখন তিনি উঠলেন এবং মদিনায় ফিরলেন।

এদিকে তাদের অনুপস্থিতির সুযোগ পেয়ে কপট মিথ্যুকেরা সাফওয়ানকে জড়িয়ে তাঁর সম্বন্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করল। আয়শা ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অসুস্থতার সময় তিনি তাঁর পরিজনদের কাছ থেকে আগের মতো সহানুভূতি পেলেন না। আয়শার ভাষায় : ‘বিশ দিনে রোগমুক্ত হলাম, কিন্তু ততদিন আমি এই কুৎসা সম্পর্কে কিছুই জানিনি। এরপর আমি আমার এক প্রতিবেশিনীর মুখে এই কথা শুনলাম। আমি আমার কান্নার বেগ রোধ করতে পারলাম না, মনে হলো আমার কলিজা ফেটে যাবে।’

বৈষ্ণব পদাবলি বা পরবর্তীকালের বাউল-সুফি-ফকিরদের পদ শুনলে বোঝা যায় রাধার কুঞ্জে কৃষ্ণের যাত্রাকে কত ভাবে কত রূপে যে কল্পনা করা হয়েছে তা বলে শেষ করা যায় না। এ-পথ কালেভদ্রে কুসমাস্তীর্ণ, না হলে সর্বদাই কণ্টকে কণ্টকে আকীর্ণ।

‘আয়শা’ কবিতাটি এই ঘটনার অভিঘাতেই লিখিত। মদিনার দিকে ফেরার পথে যাত্রাবিরতির প্রেক্ষাপটই হল এর বিষয়, তবে রটনাপরবর্তী পরিস্থিতির অল্প ছায়াপাতও রয়েছে এখানে। এই আলোচিত ঘটনাটি পড়েছি অল্প বয়সে, তবে তার বহু পরে রামায়ণে রাম-সীতার সংলাপ পড়বার সময়ও এই ঘটনা বারবার মনে পড়ছিল। এখানে ধর্মরক্ষার জন্য দুই পতিই ছিলেন বদ্ধপরিকর আর দুই পত্নীকে দিতে হয়েছে ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা।

আয়শার নিষ্কলঙ্ক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাড়ির দাসী বুরাইরা বলেছিল :‘আমি তার সম্বন্ধে ভালো ভিন্ন কিছু জানি না, আমি আয়শার এই দোষ জানি যে যখন আমি ময়দা মাখি আর তাকে সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে বলি তখন সে তাতে মন না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আর ভেড়াটা এসে তা খেয়ে যায়’। এতটুকু কবিতায় সেই ব্যথিত নারীর দুঃখের কথা কতটাই-বা প্রকাশ পায়!

আয়শা

তাকে ফেলে চলে গেছে উট আর
ওই নিশিপাওয়া রাতের চালক,
তাকে একা ফেলে চলে গেছে হাওদা, আর,
তারও বহু আগে রক্তলিপ্ত দিনের গোধূলি

আমি কাছে গিয়ে দেখি
তার করুণ মুখের ওপর নেমে এসেছে রজনি
বুকজুড়ে তীব্র মরুঝড়;
মাথায় বজ্র আর কালো চুল পুড়ে গেছে তার কঠিন আলোয়
তার চোখে জল, তার ঘন নীল চোখে মরু রাতের বিদ্যুৎ আর
পাগলা হাওয়ার চাপে
এক প্রস্ত লতার মতো ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার ঠোঁটজোড়াখানি

দেখি খুঁজে-ফিরে-পাওয়া
ছোট্ট গহনার ভারে তার ও-পালকশরীর
বড়শির মতো নুয়ে পড়ছে মাটিতে,
দেখি পাগলা হাওয়ায় ‘মদিনা’ ‘মদিনা’ বলে
কেঁপে ডেকে উঠছে উড়ে-যেতে-চাওয়া তার মধ্যরাতের হৃদয়


আয়শা কবিতাটি নারীভাবের, পুরাণচেতনায় পরোক্ষত রাধাভাবের, কিন্তু নিম্নোক্ত কবিতাটি কৃষ্ণভাবের।

সংকোচে স্বীকার করি, ‘যাত্রা’ কবিতার লইনে লইনে রয়েছে এক ঘোরগ্রস্ত সময়ের স্মৃতি। দেহ-মনে বিরহ-মিলনের কাতরতা এবং সে-অর্থে এতে দেহতাত্ত্বিক অনুষঙ্গের ছিটেফোঁটাও যথেষ্ট। এ-অবস্থাকে তুলে ধরার জন্য নিজেকে কৃষ্ণের জায়গায় কল্পনা না-করে উপায় ছিল না। কবিতায় কৃষ্ণ জানাচ্ছে, সে কীভাবে রাধার নিরালা কুঞ্জে পৌঁছবে তার সংবাদ। বৈষ্ণব পদাবলি বা পরবর্তীকালের বাউল-সুফি-ফকিরদের পদ শুনলে বোঝা যায় রাধার কুঞ্জে কৃষ্ণের যাত্রাকে কত ভাবে কত রূপে যে কল্পনা করা হয়েছে তা বলে শেষ করা যায় না। এ-পথ কালেভদ্রে কুসমাস্তীর্ণ, না হলে সর্বদাই কণ্টকে কণ্টকে আকীর্ণ। এই সবের উল্লিখন আছে এ-কবিতায়ও; এতে আছে আজলি ঝড়, বিজলি, সর্বনাশা আলো এবং অঝোর বৃষ্টির কথা; আশংকা রয়েছে হাওয়ায় হাওয়ায় রাধার চুয়া-চন্দনমাখা শয্যা উড়ে যাবে কি না এবং রাধার সখিরা পান হাতে নিয়ে তাকে স্বাগত জানাবে কি না। বাস্তব জীবনের সংকট ও কাতরতা নিয়ে কিছু লিখতে গেলে এইসব পঠন-স্মৃতি-অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া কঠিন। আমিও ভুলতে পারিনি, বরং নির্র্ভর করে কবিতাটি লিখে স্বস্তি পেতে চেয়েছি।

যাত্রা

তোমার নিরালা কুঞ্জে ধীরে-ধীরে পৌঁছে যাব আমি

তবু পন্থ-হাওয়া যে কাঁপছে, মনে হয় লাল কৃষ্ণচূড়া; বিরহ অনন্ত ভেবে লেজও কি নাড়াচ্ছে কোনো নীল শুয়াপাখি? যেন-বা আজলি ঝড়, কাঁপছে দেখি এ-তনের খুটিও! বিজুলি চমকালে দেখি বাইনে-বাইনে সর্বনাশা আলো, এবং অঝোর বৃষ্টি, জল নামে ডালপালা বেয়ে

তোমার নিরালা কুঞ্জে তবু ঠিক পৌঁছে যাব আমি

তখনো কি দুলবে চাল? খিড়কি-ঢাকা কলাপাতা থোর? হাওয়ায় উড়বে নাকি চুয়া ও চন্দনে-ভাসা বিছানা তোমার? ঠিকঠাক পৌঁছে গেলে পান হাতে দাঁড়াবে কি চন্দ্রা কিংবা বিশাখা ললিতা?

লেখাটি শেয়ার করুন :

মোস্তাক আহমাদ দীন

মোস্তাক আহমাদ দীন। কবিতার পাশাপাশি সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ে গদ্য লেখেন। পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক, বর্তমানে লিডিং ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। কাব্যগ্রন্থ : কথা ও হাড়ের বেদনা, জল ও ত্রিকালদর্শী, জল ও শ্রীমতী, ভিখিরিও রাজস্থানে যায়, বানপ্রস্থের আগে। প্রবন্ধ : কবিতাযাপন, আটকুঠুরি, মাটির রসে ভেজা গান, কাজী আবদুল ওদুদের মননবিশ্ব। সম্পাদনা : পরার জমিন, মকদ্দস আলম উদাসী, আবদুল গফ্ফার দত্ত চৌধুরী : তাঁর স্মৃতি, তাঁর গান, অকূল নদীর ঢেউ, শাহ সুন্দর আলী, মাসিং নদীর তীরে, ফকির সমছুল, নূরে মারিফত, শাহ ছাবাল আলী, ছহি ফকির বিলাশ অর্থাৎ মারফতি ভেদ, মুন্সী মোহাম্মদ আশ্রফউদ্দিন, কামালগীতি, কামাল উদ্দিন, আশিকের রত্ন সমগ্র, ফকির সমছুল, এ, জেড, আব্দুল্লাহ রচনাসমগ্র, নির্বাচিত গান, মকদ্দস আলম উদাসী ইত্যাদি। ভিখিরিও রাজস্থানে যায় কাব্যের জন্য পেয়েছেন এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন চিহ্ন পুরস্কার ও লোক সাহিত্য পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!