কবিতা

খোলস কুড়াবার ফাঁকে

মর্মসখা
ঘাড় মটকে ছেড়ে দিয়েছেন উন্মাদের স্মৃতিতে

আমরা
ব্রহ্মাণ্ডকে ত্রিশূলে গেঁথে ছুটে বেড়াচ্ছি ছিন্নমস্তা হয়ে

দূরে
ভ্যান গঘের আত্মরতি ডুমুর হয়ে ঝুলে আছে
মনোনীতার ডালে ডালে

কুণ্ডলিনী চক্রের ইশারা বজ্রযানেও আছে, এবং সহস্রাই যে অন্তিম মায়া নয়, বৌদ্ধ তান্ত্রিকরা তা জেনেছিলেন ‘সামাদ’ স্তরটির ঈঙ্গিত পাওয়ার আগেই।

হিমালয়ে, পুনাখায় গিয়ে ঘোর অমাবস্যার তিথিতে বজ্রযানে নিবিষ্ট এক উচ্চ মোকামের সাধুর সাথে তার ভস্মগুহায় একদা আলাপ করছিলাম। কাঠের জাদুঘরের পাশে নদীবাহিত পারো শহর থেকে আনা অতিরসালো আপেল, লোবান আর ঈশানের পিদিম যোগে আমায় ফলাহার করান, অতঃপর ময়ূরের মূর্চ্ছা থেকে বেরিয়ে শ শ নারী শ্রমণ উদ্বাহু হয়ে শামা গাইতে থাকে! সহসা নফসে ওয়াহেদানিয়াতের একটা পর্যায়ে মহাজন দুম্ করে চুম্বন করে বসলেন আমায় এবং আস্তে-আস্তে ড্রাগন রাজার ঘুমে উড়ে গেলেন।

এর বেশি বলা গুরুর বারণ আছে।

ঋণ শুধু অর্থে নয়, সম্পর্কেরও ঋণ আছে

বনটিয়ার তাৎপর্য আছে, পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো আছে,
আছে ডুবোনৌকায় বিস্তারিত কিছু মাছ

ঋণশোধের দ্বিধায় দুটো মানুষ যখন
ক্রমশ বাউলগানের আলেয়া মুছে চলেন,

জেনেছি, গভীরতর করমচাফলের পাশে
ইতিহাসচেতনা একটা ভ্রান্ত ধারণা

একটা তোলপাড় মুকুর বয়ে চলেছি রক্তে সহস্র বছর,
একটা সর্বনাশা পৃথিবী বয়ে চলেছে ফণাযুগ থেকে

যে শহরে আঁদ্রে ওয়াইদার নাম কেউ শোনেনি,
সেখানে রাজনৈতিকের ছায়া বৃষ্টিতে ভিজে না

যে দেশে সমস্ত ব্ল্যাকবোর্ড শুয়োরের গুয়ে ডুবিয়ে রাখা গেল না,
সেখানে বন ও দেবীর স্তুতি সকরুণ, প্যাকেটজাত

পাখির স্বীকৃতি না পেলে তোমার বিপ্লবী মন বস্তুত একটা রাক্ষস

পোর্ট্রেট করতে গিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়ি!

ছবিতে মুখের আদল অনুপুঙ্খভাবে আঁকতে গিয়ে ভাবি— চেহারার পাশাপাশি ঐ মানুষটার ব্যক্তিত্ব, অবচেতন ফুটিয়ে তোলা যায় কি না। ছবিতে তার শূন্যতা, সংস্কৃতি কিংবা তার বিকার কতটা প্রকাশ করা শোভন হবে?

আমি কি আমার বৃষ্টিপ্রস্তাবিত সন্ধ্যার বাইরে গিয়ে তোমার বৃষ্টি-অনূদিত সান্ধ্যরতির দিকে আরও খানিকটা এগুবো?

ঝুলন্ত অসংখ্য তরল খাঁচার দেশে আমি কি মডিগ্লিয়ানি ও পিকাসোর দ্বৈরথ হয়ে সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ট্র‍্যাজেডিগুলিকে নতুন ব্যাখ্যায় পোট্রেড করতে পারব?

মেয়ে হায়েনার দল আমায় না খেয়ে হিরহির করে
টেনে নিয়ে গেল এক স্বৈরিণী চন্দনগাছের নিচে,
আমার শরীরে তারা একে একে পেসাব করে চলে গেল

এই নেগেটিভ থেকে কীভাবে ফিরব আমি লোকালয়ে, ছবি হয়ে?

চিনামাটির বাসনে আঁকা আড্ডারত গৌতম আর
ঝর্ণারত গে সৈনিক বেরিয়ে আসতে চাইছে পাত্র থেকে

তোমার ফেনাশীর্ষ জীবনে কীভাবে ফিরব আমি
অসামান্য মল্লার নিয়ে, যুক্তাক্ষরবিহীন?

বীজের অন্ধকার মুছে মুছে এগিয়ে যায় সঞ্চারিত ময়ূর

শিনটোদের মতো আমিও বিশ্বাস করি, হরিণ হচ্ছে দেবতাদের পবিত্র দূত। কী বার্তা বহন করে তারা তা বিরোধাভাস জানে, শর্তহীন আপেল জানে। কী আরোগ্য ঘনিয়ে তুলেছিল তারা, দুখের দেউল জানে।

দুটো মহাদেশের মাঝে, বরফের ভাঙা ভাঙা চাইয়ের উপর দাঁড়ানো তিনটা বল্গা হরিণ তিনটি ভিন্ন সময়ের দিকে চলে গেল—

শুধু বাঘমাতা জানে, সব আত্মজীবনীতে কিছু ফুটনোট, অপ্রিয় কথা, মৃগশীর্ষ ঊহ্য রয়ে যায়!

জাফরান কালিতে আঁকা মৌমাছির গুঞ্জন
আগুনে পুড়ছে

আগুনে পুড়ছে
তোমার আমার বিরহবাসর, নক্ষত্রসংসারে

মোরগলড়াই যে আসলে মোরগের স্মৃতিভার নয়,
খনি লুট না হলে আফ্রিকা কীভাবে জানত?

আমাদের শ্রেণীচেতনা ও লু-গোধূলির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন
এক লিপ্ত ওয়াচটাওয়ার, দূরে

রেইপড হতে হতে
গর্ভপাত হয়ে যাওয়া গলিত নবজাতককে কোলে নিয়ে
পালিয়ে এসেছিল অশরীরী এক পাগলিনী!

তার জন্য
উন্মুক্ত বন্দর, দুটো শাকভাত আর মোমবাতি রেখো

সব অপমৃত্যুরা ডুবনৌকো হয়ে ঢেউ পাঠাবে
শিশুদের হাতের আজলায় জমা জলে,
এক বৃষ্টিবিস্তারিত ভোরবেলায়

১০

পবিত্র পশুর পোষাকে মায়ান নর্তকীরা নাচছে মন্টেজুমার ঢেউয়ে। তাদের রক্তাক্ত পালক, হাবশি মেঘ ও মহান মুররা পিরামিড গড়েছিল খরগোশ পাল ও আজটেক নদীর তীরে। অথচ সাদারা তদেরকে কাগজের ফুল বানিয়ে তাতে ভ্রমরের রমণঋতু ঘনিয়ে তুলতে বললে, ওথেলো সে ফুলে কাগজের মৌমাছি এঁকে দিয়েছিলেন।

মাউথ অর্গান থেকে পিছুডাক তুলে নিলে অযৌন তিল পড়ে রয়। মানুষ তো ভালবাসতে ভুলে গেছে, সে যদি কাফকায়েস্ক নদী থেকে ভেসে উঠত, তবে কোন ফুল আর বাঞ্ছাবিহীন ঝরে পড়ত না বৃষ্টিতে…

লেখাটি শেয়ার করুন :

অমিত রেজা চৌধুরী

অমিত রেজা চৌধুরী জন্ম সত্তরের দশকে। লেখালেখির সূচনা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখেন। মূলত লিটল ম্যাগাজিনে লেখেন । সংগীত, সিনেমা, ভ্রমণ, পুরনো বইপত্র সংগ্রহে আগ্রহী। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর, বহুজাতিক কোম্পানিতে ক'বছর চাকুরি করেছেন। কোনো গ্রন্থ প্রকাশ হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!