বাঘমাস
আধাপথে বান্ধা আছি
চোখের সামনে যদি না দেখি তোমারে
আমার বেদনা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে
আধাপথে বান্ধা আছি নিশানা সদৃশ
জীবন এমন গোল মিলে না কিনারা।
বৃষ্টিভেজা মুরগির মতন গা ঝাড়া
দিয়েও সরে না শালা, শরীলের বিষ।
জীবন পালন করি বাউলের বেশে
লোকেরা আমাকে ভাবে গাঞ্জার কবর।
ঘরছাড়া মানুষের আমিই তো ঘর
চাপা পড়ে আছি যেন ঘৃণা আর দ্বেষে।
ঘরের টিনের চালে জমে আছে পাতা;
এ ভেবে সরাও ঘৃণা, সাফ করো সখী
মেস্তরির মতো হও আমার নির্মাতা
নিজেকে শিল্পের মূল্যে দেখো না নিরখি!
সখী বিষহরি
শাপলার কথা বলি শোনো,
এটা নয় বন্দনার গীত
না পেয়ে কিনারা-কূল
ওইরূপে ভাসছে পিরিত।
তোমাকে সন্তুষ্ট করে যাই
নতুন, সুন্দর উপমায়
সাড়া না দিলেই বুঝে উঠি
কত বিষ থাকে উপেক্ষায়!
ওই বোতলের কথা ভাবি,
কীভাবে বহন করে বিষ, জল!
যন্ত্রণায় কাটছে না রাত
হয়ে আছি বিষের বোতল।
জোয়ান বয়সে পেয়ে গেছে
বুড়ার অবস্থা; মরি-মরি
আমাকে উদ্ধার করো এই
বিষ থেকে, সখী বিষহরি।
শিকার অথবা প্রেম
মানুষ তো কতকিছু ধরবার চেষ্টা করে
নিজেকে ধরার মতো শিকারি কোথায়!
মনে পড়ে
বাড়িতে কুটুম এলে
গোস্ত দিয়ে আহার করাতে
মোরগ ধরার জন্য দৌড়ানোর কথা।
অনুরূপ নিজেকে দৌড়াচ্ছি
ধরতে পারলে তুলে দেব
তোমার দুহাতে
প্রেমিকা আমার।
শিকারি হওয়ার জন্য নিজেকে ধরতে পারাই যথেষ্ট।
জীবন সংক্রান্ত
জীবনের পাশে এককাপ কান্নাও থাকে
লম্বা টোস্ট বিস্কিটের মতো ক্ষয় হতে দেখি
প্রশ্ন জাগে, কে খাচ্ছে আমার জীবন!
ভিজাভিজি ছাড়া জগতে কিছু নাই
নারী-পুরুষ একে-অপরের পাশে ভিজে
মাটি-প্রকৃতি ভিজে কুয়াশা, বৃষ্টিতে
কেউ কেউ ভিজে হয়তো মুর্শিদের করুণায়
আমি ভিজি কেবল কান্নায়
জীবনটা ভিজে যাচ্ছে
খেয়ে নিচ্ছে কেউ
জামিলখেকোর নাম আল্লা না কি?
প্রশ্নে প্রশ্নে ভিজলে মানুষ
পরিশুদ্ধ হয়, উজ্জ্বলতা তরবারি-রকম।
বাঘমাস
যে মাসে অর্থের কমজোরি থাকে
তাকে বাঘমাস বলে জানি
আমাকে খেয়ে ফেলতে চায় যেন!
বুঝতে পারি, অভাব এতই সুন্দর করে তোলে, দেখতে ঠিক হরিণশাবক।
এর বাইরে আরও এক বাঘমাস আছে
যখন চলে তোমার সনে সম্পর্কের টানাপড়েন
বুঝতে পারি, সঙ্গীহীনতার ভয়ে মানুষ কতটা সরল হয়ে যায়, তখন হরিণশাবকের তুলনা চলে।
এই বুঝি চলে এলো বাঘ!
তবু সান্ত্বনার প্রকৌশল দেখাই নিজেকে
তুমি যন্ত্রণা দিলে, জ্বালাতন করলে ভাবি,
তোমার চারপাশে
অন্ধকার নেমে এসেছে
আমাকে জ্বালিয়ে
আগুনের আলোয়
হয়তো নতুন পথ বের করো।
নিজেকে আলোর দিশারি ভেবে, আনন্দে
উন্নত স্তনের মতো লাফালাফি করি।

মিসবাহ জামিল। জন্ম : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পূর্বচাইরগাঁও গ্রামে। প্রকাশিত কবিতার বই দুটি। মানুষ খাওয়ার পদ্ধতি (২০২২), রাশেদা মোকাম (২০২৩)।