একটা মামুলি দিন, মেঘ তাকে মল্লার করেছে…
মেঘমল্লার
একটা মামুলি দিন, মেঘ তাকে মল্লার করেছে।
এতটা সরল এই বৃষ্টিজল—
তুমি বলেছিলে,
চাইলেই ধরা যায় যে-কোনো আঙুলে।
যেমন অন্ধ ফকির তাঁর আখেরী পারানী
বিশ্বাসে পার হয় দরিয়ার পানি…
দশ দিকে দশ আঙুল দুই হাত পেতে
আমিও গিয়েছি আজ বৃষ্টিকে ছুঁতে।
সহসা আমাকে দেখে বজ্রের সেতার
মেঘের বদলে দিল আগুন মালহার।
এতটা সরল এই বৃষ্টিজল—
তুমি বলেছিলে,
চাইলেই ধরা যায় যে-কোনো আঙুলে।
ছিল মামুলি দিন, মেঘ তাকে মল্লার করেছে।
নিখোঁজ সংবাদ
বৃষ্টি দেখতে গিয়ে লোকটি আর ফিরে আসেনি,
দুদিন পর তাঁর ভেজা দেহ ভেসে উঠল দূরে, ধলেশ্বরীতে।
নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হয়নি কোথাও,
শুধু পুলিশ জানাল, ‘আশ্চর্য কিছু নয়। আজকাল এরকম হয়।
বৃষ্টি দেখতে গিয়ে কারো কারো মনে হতেই পারে
আমার তো ভেসে থাকার কথা আছে ধলেশ্বরী-কিনারে’।
অন্নদামঙ্গল
নিচু কবিদের দেশে এসে গেছি, খুব ভোরবেলা
বোন ফিরে আসে বাড়ি, শান্ত হয়ে দুপুর এখন।
আমিও আঁকড়ে ধরছি জানালা, লৌহ, জঙ্গল
শার্সিতে সমুদ্র…
কাঁচ ভেঙে ফের দ্রাঘিমার দেশে ছুটে যেতে হবে
যেদিকে তুমি থাকো, সেদিকেই অন্নদামঙ্গল…
রাষ্ট্রবিপ্লব
তোমাকেই রাষ্ট্র বলে মনে হয়েছিল একদিন,
এরপর বহুকাল কেটে গেছে—
রাষ্ট্রবিপ্লবের বাসনা আমি ভুলে গেছি।
ব্যর্থতা
১
আমাদের মহল্লার একটি পুকুর কয়েক বছর আগে শহরে গিয়ে সরোবর হয়েছে, এখন পথে দেখা হলে চিনতেই পারে না কথাও বলে না। আর, তার পাশে ছিল যে নদী, স্কলারশিপ নিয়ে এখন সমুদ্রে পড়তে গিয়েছে।
তারই দুইকুড়ি হাত দূরের একখানা জারুল গাছ ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিল। শুনেছি, তার অনেক দুঃখে দিন কাটে। পাতালের অন্ধকারে আজ তাকে আগুন বিক্রি করতে দেখেছি। এক আগুন এক আনা, দুই আগুন দুই আনা, তিন আগুন পাঁচ আনা…
দেখা হতেই আমাকে বলেছে, পুনরায় পরীক্ষা হলে, সে এক হাতেই লিখে দিয়ে আসবে তিনটি পৃথিবী। কিন্তু, পাঠশালায় তাকে আর ফেরত নেবে না।
কিছু সিকেপয়সা জমলেই, সে একটা জমজমাট অগ্নিগিরির দোকান দেবে, তিনক্রোশ দূরের খড়সাম্রাজ্যের বাজারে…
২
আমার প্রথম চাকরিটা ছিল একটি সূর্যমুখী ক্ষেতে। আমার কাজ ছিল মৌমাছিদের পাহারা দেয়া। কিন্তু প্রায়ই মৌমাছিদের পাখার বাতাসে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম, ফলে চাকরিটি চলে যায়।
আমার দ্বিতীয় চাকরি ছিল পতঙ্গদের ট্রাফিক বিভাগে। সেখানে আমি অন্ধ উঁইপোকাদের রাস্তা পার করে দিতাম।
শুনেছি, কারা যেন উঁইপোকাদের কাছে সস্তায় চোখ বিক্রি করে আজকাল। আমি একা রাস্তার কোণে বসে থাকি— অন্ধ ও পারাপারবিহীন।

খান রুহুল রুবেল। জন্ম ১৯৮৭, গোপালগঞ্জ। সাহিত্য, বিজ্ঞান, সভ্যতার ইতিহাস, অর্থনীতি তাঁর পাঠ ও চর্চার বিষয়। প্রকাশিত গ্রন্থ : ডুবোপাহাড় (২০১৭,কবিতা), প্রাচীন বিজ্ঞান (২০১৭, বিজ্ঞান/ ইতিহাস)।