ঘাসান জাকতানের কবিতা
ফিলিস্তিনি কবি ঘাসান জাকতান ১৯৫৪ সালে বেথেলহেমের নিকটস্থ বেইত জালায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আম্মানে বসবাস করেন, তারপর বৈরুত চলে যান। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিউনিসে কাটান। বর্তমানে তিনি রামাল্লায় আছেন। একটি উপন্যাস এবং কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এছাড়াও তিনি দুটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। রামাল্লার ‘দ্য হাউস অব পয়েট্রি’ কর্তৃক প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ‘আল-শুয়ারা’ (কবিগণ) পত্রিকার তিনি প্রধান সম্পাদক। তাঁর লেখা ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ‘গাইড’ ও ‘বালিশ’ কবিতাদুটি সারগন বৌলাস এবং ‘অন্ধকার’ কবিতাটি সারাহ মাগৌরি আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।
অনুবাদ: সাইদুল ইসলাম
গাইড
তিনি আমাদের দেখিয়ে দিলেন …
এই দিকে।
তারপর হারিয়ে গেলেন
ধসে-পড়া বাড়িগুলোর ভিতর।
বিস্ফোরণের পর
দেয়ালের গর্ত থেকে তার আঙুলগুলো
এখনও দেখিয়ে দিচ্ছে:
এই দিকে …
এই দিকে।
আয়না
ক্ষরণের কালে দুটি মুখ উঁকি দেয়—
বাবা আর তার ঘোড়ার মুখ; ছোট্ট একটা চাঁদ
আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে যখন যাবে আটকাব।
যদি ছেলেবেলা ফিরে পেতাম,
দুহাতের মধ্যে সেই চাঁদখানা বন্দি করতাম কিছুক্ষণ
আর যখন মন চাইত, দূরে সরে যেতে দিতাম।
একটি হাত নাড়তে দেখতাম নদীর উপর
অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে কেঁপে উঠত হাতটি,
বাতাসের তীব্র স্বাক্ষর কিংবা ফুলের সুগন্ধ—
সবকিছু মুছে দিত।
চঞ্চল আঙুলগুলো একটুও থামত না,
সারাক্ষণ কাঁপত,
মরিয়া হয়ে ঝঙ্কার তুলত জলের উপর,
ক্লান্ত হয়ে পড়লে ডুব দিত গভীরে।
আমাদের কত আনন্দ উপরে,
আর জলের নীচে,
ডুবে আছে কামনার বন—
পরাজিতদের প্রদেশ।
বালিশ
এখনও কি সময় আছে
তাকে বলার,
মা,
কেমন আছ,
আমি ফিরে এসেছি
গুলিবিদ্ধ হৃৎপিণ্ড নিয়ে।
এই আমার বালিশ
আমি শুতে চাই
ঘুমোতে চাই।
যদি আবার কখনো
যুদ্ধ এসে কড়া নাড়ে,
তাদের বোলো:
বিশ্রাম করছে সে।
অন্ধকার
হাত রাখার মতো
অন্ধকারের একটি গর্ত আছে
পাঁচ আঙুলের কালো হাত
অন্ধকারের একটি বাড়ি আছে
মৃতদের আস্তানা
মৃতরা তাদের গোপন কথাগুলো
আবারও কবর দিয়েছে ইটের আস্তরে
কূপের তলদেশে
শ্বাসরুদ্ধ পাথরগুলো থেকে
উৎসারিত কণ্ঠের গলা টিপে মারছে অন্ধকার
আর একটি কান্না
প্রতিবাদের রূঢ় একটি আর্তনাদ
উঠে আসছে বনের অন্ধকার গহীন থেকে।

সাইদুল ইসলাম। জন্ম ১৮ অগাস্ট ১৯৭৮। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এছাড়াও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পপুলেশন, রিপ্রোডাকটিভ হেলথ, জেন্ডার এন্ড ডেভালপমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। শূন্য দশকে ছোট কাগজ ফলক সম্পাদনার মাধ্যমে সক্রিয় হোন সাহিত্যচর্চায়। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো : গ্লাসের শেষবিন্দু জল [২০২১], রাতের বাসগুলো [২০১৯], বিড়ালের সঙ্গে [২০১৪], আহত চড়ুই [২০০৬], অনন্তর জেগে থাকে দীঘল পিপাসা [২০০০]। অনুবাদগ্রন্থ : আরবি ভাষার কবি ফুয়াদ রিফকার নির্বাচিত কবিতা: বেদনার্ত গাঢ়পাতাগুলো [২০১৮], নতুন আরবের কণ্ঠস্বর: কাসিম হাদ্দাদের নির্বাচিত কবিতা [২০১৬] এবং নোবেল বিজয়ী কবি টমাস ট্রান্সট্রোমারের নির্বাচিত কবিতা [২০১২]।