কবিতা

চোখের মতো কানের কেন যে শাটার থাকে না কোনো

চাঁদের মেয়ে

চাঁদের মেয়ের সাথে স্কুলে যাই,
একসাথে পড়ি। ক্লাসে ওর রোল এক হলে,
আমার বত্রিশ। আসতে আসতে বই,
যেতে যেতে ফুল; মন দেয়ার আগেই তার
বিয়ে হয়ে গেল—
বয়সে দ্বিগুণ এক রাক্ষসের সাথে

সে এখন সংসার সামলায়। বছর বছর
সন্তান প্রসব করে। শাশুড়ির সেবা করতে করতে
বিল থেকে তুলে আনে হাঁস

ব্যস্ততা ক্রমশ বাড়ে—
অভাব-অনটনে নিজের পা জ্বালিয়ে
রান্না করে ভাত। আগুনের কাছে
পুড়তে পুড়তে কয়লা। ত্রিশের আগেই
একদিন হঠাৎ সে বুড়ি হয়ে যায়

কমরেড

কমিউনিস্ট পার্টির দু’জন সদস্য
কমরেড নূরুদ্দিন আর রবিশঙ্কর গায়েন—
পার্টির কাজে কোথাও যাচ্ছিলেন অপরাহ্নে।
যেতে যেতে ট্রেনের সাথে দুর্ঘটনায়
দুমড়েমুচড়ে গেল তাদের মাইক্রো।

রক্তাক্ত আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে
স্পটেই মারা গেলেন দুই কমরেড।
দলের সাথে সম্পৃক্ত লোকজন এল,
আত্মীয়স্বজনও এল সাধ্যমতো; পার্টি অফিসে
শেষ শ্রদ্ধা জানানো শেষে—
আজিমপুরে
সমাহিত হলেন নূরুদ্দিন
আর
রবি দা’কে নিয়ে যাওয়া হল শ্মশানের দিকে,
পোস্তগোলায়

কবিতা উৎসব

কবিতা উৎসব হচ্ছে
মঞ্চে বসে আছে অলোকিত চুতিয়া সমাজ।
নিচে
দর্শকসারিতে কবি ও লেখক।

তন্বী নয়নে বহ্নির উপস্থাপনায়
মাইকে একের পর এক আলোচক
ছিঁড়ে ছিঁড়ে বোঝা বেঁধে দিচ্ছে চমৎকার
আর
আমরা শুনছি—হাততালি দিচ্ছি মুহুর্মুহু

ভয়াবহ কিছু
কিম্বা
হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখে বন্ধ হয়ে যায় চোখ
ঠিক এইরকম
এই চোখের মতো প্রিয়তমা কানের
কেন যে সাটার থাকে না কোনো!

পানি ও জল

শ্যামা আর আমি পাড়াতো ভাই-বোন।
আমার মতো শ্যামাও আকাশকে আকাশ
নদীকে নদী
পাহাড়কে পাহাড় নামে ডাকে।

ধানক্ষেত
বাতাবীলেবু
গাজর, টমেটো, ফুলকপিকেও
আমরা একই নামে চিনি।

এই যে রেলস্টেশন,
আন্দোলন,
সংগ্রাম
সমাজতন্ত্র
ফুল, পাখি, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বাতাসও
আমাদের কাছে একই।

শ্যামা শুধু পানিকে জল
আর
আমি জলকে পানি বলে থাকি।
পানি ও জলের এই পার্থক্য সত্ত্বেও
আমাদের প্রেম হল, বিয়ে হল না

শীত রাতে

ধরো, কনকনে শীতে
তোমার জানালা খোলা
কী যে হল তোমার! এ
রাতে নিজের ভেতর
ডুবে যাচ্ছ খোলামেলা।

দরজায় টোকা নাই
মানে কেউ আসছে না।
শিশিরের আনাগোনা
আর পাতা ঝরা ছাড়া।

তুমি ভাবছÑতোমার
মতো ওই চাঁদটাও
বড় একা। যদি কেউ
না-ই আসে ক্ষতি নাই।
ভালোবেসে কাছে থাক,
শুধু সেই শূর্পণখা।

আসমানি খাবার

মুসা নবীর আমলে মান্না-সালওয়া পড়ত
আকাশ থেকে।
বনি ইসরাইলের লোকজন সেগুলো খেতেন।
নিষেধ অমান্য করে—
আগামীর জন্য সঞ্চয়ও করতেন কেউ কেউ।
একই খাবার প্রতিদিন খেতে খেতে
রুচি মরে গেলে-তারা খেতে চাইল
পিঁয়াজ, মশলাযুক্ত খাবার।

আমাদের পৃথিবীতে যুদ্ধ হচ্ছে প্রতিদিন,
মৃত মায়ের স্তন থেকে চুষে খাচ্ছে শিশুরা,
ইঁদুরের গর্ত থেকে কুড়িয়ে আনছে গম

তবু মান্না-সালওয়ার সেই আকাশ
এখন আর আকাশে নাই।
সেখানে উড়ছে ড্রোন, যুদ্ধবাজ প্লেন

খাবারের মতোই নেমে আসছে গুচ্ছ গুচ্ছ বোমা

লেখাটি শেয়ার করুন :

সিদ্দিক প্রামাণিক

সিদ্দিক প্রামাণিক। জন্ম : ২১ আগস্ট ১৯৭৯, কুষ্টিয়া, কুমারখালীর চরভবানীপুর গ্রামে। প্রকাশিত কবিতার বই ৮টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!