স্বপ্ন ও নৈঃশব্দ্য
নিঃশেষ হয়ে যায়নি
এই যে তুমি
আমি
আমাদের চারপাশ
কোথাও একটু জল নেই, বাতাস নেই
কেবল হিংস্রতা
ভয়
আতঙ্ক
আর ঘেন্না
প্রতিদিন
একটু একটু করে নিভে যাচ্ছে
মাটির প্রদীপ
দেখো
কোথায় তুমি
আমি
শোনা যাচ্ছে
ভেড়ার সঙ্গে মানুষের হয়েছে সন্ধি
এই যে তুমি
আমি
আমাদের বশ করা যাবে না
সাপের খেলা
অথবা
অবিশ্বাস্য ফুলের সুগন্ধে
এখনও
নিঃশেষ হয়ে যায়নি ভোরের আগুন
ঈদ
কারও পাকা ধানে মই দিইনি
বুঝতে চাইনি
কত ধানে কত চাল
বোবা হয়েই থেকেছি
বোবার কোনো শত্রু নেই
এই সত্য জেনে
যে সমস্ত গুন বোবা মানুষের থাকে
সবই ছিল আমার
একটা দিন প্রাণভরে শ্বাস নিইনি
মনের মানুষের সাথেও
একটু উচ্চস্বরে কথা বলিনি
আমরা তো
বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছি সবকিছু
এবং দেখেও ভান করি যে
কিছুই দেখি না
তবু ধরে নিয়ে এলো আমাকে
আমার ছোট ভাই এসেছে
তিনদিন পর
এই তিনদিন কোথাও খুঁজে
আমাকে পায়নি
সেমাই নিয়ে এসেছে
গায়ে নতুন পাঞ্জাবি, আতরের ঘ্রাণ
আমাকে গুম করেনি
তাই বাসায় ঈদের আনন্দ
মানুষের পরিচয়
কে ধারণ করতে পারে
নিসর্গ ও প্রেম, মানুষের পরিচয়
সারাক্ষণ আমরা প্রেমে আকুল
তাই কি—
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে
বদলে যায় নিজেকে দেখার আয়না
একেকটা জীবন চলে যায়
ফুলবাগান হতে
সবচে সুন্দর ফুলটি ছিঁড়ে নিতে
মহৎ আবেগে
সবার গায়ে দেবদূতের জামা
দেবদূতের পোশাকই
আমাদের এখন মহান করে
অথচ আমরা
একসময় উদ্ভাবন করেছি
দেশলাইয়ের কাঠি
এখন পাতা ঝরবার ঋতু
কোথাও ঝরাপাতার স্তুপ থেকে
জ্বলে উঠবে
সূর্যমূখী ফুলের বিশুদ্ধ আলো
ফুলবাগানের মালি জানে—
মানুষকে ছুঁতে পারার মাঝে নিহীত
জীবনের তাৎপর্য
মানবিক হও কমরেড
মানবিক হও কমরেড
ভদ্রলোকেরা বলে
আর মাটিতে কোদাল চালাও;
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে
আমরা মাটি কাটি, ঠেলাগাড়ি টানি;
ভদ্রলোকেরা শিখিয়ে দেন
দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার কৌশল।
আমাদের জানালার কাছে এসে
ডুবে যায় পূর্ণিমার চাঁদ
কোনোদিন একটু সবুজ বাতাস দেখিনি
আমাদের পূর্বপুরুষেরাও না;
শুনেছি, নদীর অনেক উপর দিয়ে
ভেসে যায় প্রফুল্ল সবুজ
জানি না কোথায়
কোন দূরবর্তী ভবিষ্যতের দিকে।
বাঁশি
এ তো আমি! আমি! না অন্য কেউ!
এ যে আমি! না আমার মতো কেউ!
কে, বাজায় বাঁশি
এ তো অন্য কেউ! না আমি! না তুমি!
না, এ যে তুমি! একি তুমি! না আমি!
না তুমিও নও! আমিও নই! না কেউ!
দেখো তো, কে বাজায় বাঁশি

হানিফ রাশেদীন। জন্ম ১৫ অক্টোবর ১৯৮৬, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল। প্রকাশিত কাব্যগন্থ : শেকলের নূপুর (২০২০)।