খড়বোনার পরানসখারা
ফলিত রসায়ন
ডিঙি নাও রূপগঞ্জে যায়- সরোজিনী দুপুর কাঁপে জলে
পূর্ণিমায় সরল বৈঠায় ছলকে ওঠে জল,
জেগে ওঠে রাতজাগা মাছের প্রতিভা
পাশাপাশি দুলে ওঠে-
‘ভাসিও চোখের জলে বাগানের একলা ছায়ায়-’
ওগো রূপের মাইয়া, আকাশের ভঙ্গিমা না বুঝে
মেঘ হতে চেয়ে তুমি বিনিদ্র লণ্ঠন
হয়ে সাতরঙ অন্ধকারে
খুঁজে বেড়াও গোপন খেতের শাকপাতা, স্মৃতি-
রূপশালি ধানের শোকে পাগলাগারদের নৈঃশব্দ্য বাড়ে,
আমড়াগাছের ছায়ায় দাঁড়ানো পুরোহিত জানে-
মাড়ভাতে ডুবে আছে শালদুধ, ফলিত রসায়ন
সিডিউল চেঞ্জ হওয়ার পর
ধর্মকলের খুব কাছাকাছি তোমাদের গ্রাম
তোমাদের গ্রাম্য খামারে রচিত হয়- মায়াযোগ
পালক মেশানো গদ্যের বুননে; পিঁপড়াদের ভাতঘুম
বেয়ে পাহাড়ে উঠছে লড়াকু কষ্টের ঠাটগুলো
প্রজন্মের বোদ্ধা লাঠিয়ালরা কুড়োতে থাকে
ঘুম ও স্বপ্নের মধ্যবর্তী জলের ভাসমান সাহস-
সিডিউল চেঞ্জ হলে আমাদের সৌভাগ্যের চাঁদ-তারা
বুঝে উঠতে পারে না জল-হাওয়ার গোপন সিঁড়িটি
আর এভাবে স্থির হয়ে যায় হাটের কোলাহল
কোনো সকালই আর দুপুরের দিকে হাঁটে না
হাতঘড়ির অন্ধকারে বাসা বাঁধে চতুর ভাইরাস-
আমাদের এই ধর্মরাজ্যে তখন ধূর্ত চিলেরাই
কাব্যকলায় হাত পাকাতে অদৃশ্য স্নানঘরে ঢোকে
খড়বোনার পরানসখারা
হে ললিতকলা, ডুবে যাচ্ছো পুরনো স্নানঘরে-ডুবে যাও;
ডুবতে ডুবতে একদিন যদি ভেসে ওঠো জনান্তিকে
বেলতলায এসো,
বেলফুলের গোপন বেলায় আবার দেখা হবে আমাদের…
আমাদের পথের হাওয়ায় শালিকের নিঃসঙ্গতা ধরে
নেচে উঠবে খড়বোনার পরানসখারা
জোনাকির মরণদৃশ্যের পাঠাগারে ভুলভাল কিছু ঘটে যাবে
হে ললিতকলা, ডুবে যাও বিরহ নদীর আরণ্যক জলে-
এইসব ছায়ারূপ খেলায় তরঙ্গ লিখলে
ভাটিয়ালি মরে যাবে উজানে উজানে
বেলগাছের কাঁটায় লেখা আছে ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠা
জীবনের মানে…
তালগাছ
পরিণত ভোরের গন্ধ দুলে ওঠে তালপাতার চারণ সন্ধ্যায়-
তোমার তালপাখা, প্রিয়, দুপুর অবধি মীরাবাঈ।
তালগাছই আদি সত্য জেনে রেখো সখা,
নীরবতায় জেগে ওঠে শোকের কনভয়, জলকথা
পাতাদের খঞ্জ ডেরায়। বজ্রের নগ্ন আগুন গিলে খেয়ে
ওই গাছ, ওই চির আদিম সন্ত
কেমন দাঁড়িয়ে থাকে আধপোড়া দেহে… …; আর দ্যাখো
কাঁচপোকার আরতিসহ রোদ এসে মন্ত্র কুড়োয়
কার্বনে…
একটি রামছাগলের ছায়ার দিকে এগিয়ে আসছে নদীতীর
ওই ছায়া দুধেল ও সৌভিক-
সিমেট্রির শোক
মগডাল থেকে নেমে আসে বিশেষ্য, বিশেষণ
যৎসামান্য ব্যক্তিত্ব নিয়ে কয়েকটি ক্রিয়াপদ;
এবার আমি লিখতে পারি-
শামুকের রক্তপ্রণয় ভোর অবধি হেমন্ত
ব্যাসকূট থেকে আধাসামন্ত মন
ঘরে ফেরা ধস্ত চিন্তাগণ
ছন্দ পুড়িয়ে লিখে রাখে সিমেট্রির শোক…
বল হে, রামরাজ্যে কে কখন অব্যয় ও নিষাদ

কামরুল ইসলাম
জন্ম কুষ্টিয়া জেলার ফিলিপনগরে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। দ্বিভাষিক কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও ছোটগল্পকার। বিশ্বকবিতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস গ্লোবাল সম্মাননা [২০২০] এবং নাইজেরিয়া, ভুটান, কলোম্বিয়া, স্পেন, পর্তুগাল, রোমানিয়া থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। কাব্যগ্রন্থ : দ্বিধান্বিত সুখে আছি যমজ পিরিতে [১৯৯৯], ঘাসবেলাকার কথা [২০০১], যৌথ খামারের গালগল্প [২০০৬], সেইসব ঝড়ের মন্দিরা [২০০৮], চারদিকে শব্দের লীলা [২০১০], অবগাহনের নতুন কৌশল [২০১১], মন্ত্রপড়া সুতোর দিকে হাওয়া [২০১৪], দীর্ঘশ্বাসের সারগাম [২০১৬], বিহঙ্গখচিত লণ্ঠন [২০১৭] নির্বাচিত কবিতা [২০১৯], কিছুটা ভোর, বাতাসের গদ্যসহ [২০২০], আগাছার ইন্দ্রজাল [২০২১], গোপাল সাঁইয়ের কবিতা [২০২৩]। গল্পগ্রন্থ : বিনির্মিত ভাসান, জল থেকে জলে [২০২০]। প্রবন্ধগ্রন্থ : কবিতার বিনির্মাণ ও অন্যান্য [২০০৯], রবীন্দ্রনাথ : বিচিত্রের দূত [২০১৩], কবিতার স্বদেশ ও বিশ্ব [২০১৫], কবি ও কবিতা : কবিতার আলো ও আঁধার [২০১৮]।
অসাধারণ ছিল কবিতা গুলো।
মন ছুয়ে গেল কবিতা গুলো পড়ে…….