কবিতা

সমগ্রতা সতত হানে বুকে তীক্ষ্ণ ফলা

ক্রোড়পত্র

ওই দিকে সমুদ্র সৃজন শূন্যতা দিয়ে ঘেরা
মাটি থেকে মায়ার দূরত্ব যতখানি
সেখানে চাঁদে হাঁটো তুমি।
কখনো বলিনি যদি আলোকিত হয়―ভয়ে প্রবাল, পাথর
ভেসে যাই ভাটায় এই সংশয়ে!

ফেরারি ফুলের দল, শোনো তবে―
ঘাসের শীর্ষে জমেছে যে পারদ
তারও ক্ষোভ আছে, দৃঢ় দ্রোহ, আছে কৌণিক কোণ।

যতটা ধুয়ে গেলে ঝঞ্ঝা ও ঝড়ে টিকে থাকে রং
পরিচয়ে দাও সেখানে প্রণাম
কাছে আসো পরমাপ্রভাত, দরদি সেতু
রয়েসয়ে বাঁধো বিষের ক্রোড়পত্রে।

নাকের নথের মতো পূর্ণিমা পূর্ণ হলে
মৃত ক্যানভাসে
আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের তালুতে
যদি পারো
তোমার গা-ছমছমে গরম নিশ্বাসটুকু রেখো!

কবিতার জন্য

যে মানুষ তৈরি হল তার জন্য পথ আঁকি এসো
উপকণ্ঠে রাখি ধাপে ধাপে
উপক্রম, উপহার, উপবন―এইটুকু আপাতত।

দিন শেষে বিনাশের সূর্য মিশে যাবে
শিষ্যের গৃহ পদে-পদে সমাসবদ্ধ
আঁধারমাতৃক দেশে কালোজ্বলা আলো
সাথে তার পাঠিনী দাও ভালো।

ভেজা পায়ে কিছুটা চলুক
পিচ্ছিল পঙক্তিতে বাজালে নূপুর
শালীনতা রেখে অজুহাত দিও―

ভূতগ্রস্ত নয়, কবিতার জন্য
এনার্জি জিনিসটা বড়ই লোভনীয়!

বিপক্ষীয়

মুগ্ধতা ছাড়াই যেতে হয় বিপ্লবে
সোফিয়া পাতার মতো পাশফেরা মুখ
ভুলেও চেতনে আনতে নেই।

প্রেম―তাকে অনুচ্চারিত রাখো,
পরিত্যক্ত ফণিমনসার ঝোপে
তুমি এক অচেনা প্রাপক
কাঁটার কসম খেয়ে পাঠাও বিরহের বিবরণপত্র

সমুদ্র নেই তবু ঢেউয়ের ভাঁজপত্র ভেসে আসে
মরুভূমির এমন উন্মাদনায় তোমার দৃষ্টিকোণ
সাঁজোয়া সমস্যা ভেদ করে
মেতে ওঠে তীরের অন্বেষণে!

কেননা, উজ্জ্বল একটি দিনের জন্য
তোমাকে শোনাতে হবে
স্বতন্ত্র এক আগ্নেয়গিরি হয়ে ওঠার গল্প।

মতিগতি

বনফোটা বিমূর্ত ফুল একটানে এঁকে
শিল্পী হয়ে অবসাদে ভুগি।

আজ বাতাস বইছে উৎসর্গকৃত, বিচিত্র প্রাদেশিক
কিছু পাখি কণ্ঠের সুরাহা করতে না পেরে
প্রান্তিক পাতার আড়ালে
গান গাইছে ফিকশনের আঙ্গিকে।
মঞ্চবাহিত থোকা থোকা বক্তা
বকে যাচ্ছে ঘোষণার বিপরীতে।

যুক্তিজালের তোয়াক্কা না করে
কাঁচের টানেলে গতির গাত্রদাহ করে
ছুটে যাচ্ছে ইনভিজিবল ট্রেন।

মর্মের নিকটে এসে অস্থিরতাটুকু থাক

উত্থানকে সুস্নাত রাখতে
তোমার মুখের লাবণ্য ব্যক্তিসীমা পার হয়ে
সত্তার সমুদ্রে গল্পাকারে মিশে যাক।

ভ্রমণাখ্যান

ভ্রমণে ভয় থাকে না শীতে
অনুশোচনাহীনচিত্তে নিম্নবর্গীয় ফুলেদের কথা
অর্থান্তরে লিখে রাখা যায় ডায়েরিতে।

সত্যের অধিক চোখ চেনে তারার খেলা
ভাষার ছলে-কৌশলে
জড়িত রেখেও বিযুক্ত করি
প্রিয় রিলকে, তোমার এ গোলাপ―রাগে, অনুরাগে

মদ, মেয়োনিজ, অশ্বরব স্থিতু হলে
তাঁবু ঘিরে রাত জেঁকে বসে
আগুনের চারপাশে যতই উষ্ণতা থাক
ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে,
তোমার শূন্যতা হায়েনার হাহাকারে হাসে!

ভ্রমণে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হলে
মনে ও মাসল্-এ গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে।

লেখাটি শেয়ার করুন :

শিবলী মোকতাদির

শিবলী মোকতাদির। কবি, প্রাবন্ধিক। জন্ম : ১১ জুন ১৯৬৯ বগুড়া। প্রকাশিত গ্রন্থ : কাব্যগ্রন্থ- ধানের রচনা দিলে পত্রে, নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল, সোনার কার্তুজ, ব্যবহারিক বিস্ময়, দুর্ভিক্ষের রাতে, কায়া ও কৌতুকী, লুপ্ত সভ্যতার দিকে, অন্ধের ওস্তাদি, চকে আঁকা চোখ, বাইনারি ফরেস্ট। প্রবন্ধগ্রন্থ- ছন্দের নান্দনিক পাঠ, ছন্দকথা। মুক্তগদ্য- রৌদ্রবঞ্চিত লোক, বিনয়ী বাঁশির সুর। পুরস্কার : কবি আব্দুর রউফ স্মৃতি সাহিত্যপদক ২০১১ (কবিতায়), কবি কাজী রব স্মৃতি পুরস্কার ২০১২ (কবিতায়), বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১২ (কবিতায়), সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো গুণীজন সম্মাননা ২০১২ (প্রবন্ধে), মহিয়সী সাহিত্য ও পাঠচক্র সম্মাননা ২০১৩ (সংগঠক), শেরপুর সংস্কৃতি পরিষদ সম্মাননা ২০১৭ (গদ্যসাহিত্যে), ‘কবিকুঞ্জ’ পদক (কবিতায়) ২০১৯, ‘লোক’ লেখক সম্মাননা (কবিতায়) ২০২০, ‘বামিহাল’ সাহিত্য পুরস্কার (কবিতায়) ২০২২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!