রক্তের ভাষা
২৫
তারপর থেকে মনে হচ্ছে আমার দু’ডানায় পাখা গজিয়েছে। আমি নদীর উপর দিয়ে নদী হয়ে ভাসি। গাছের ডালে বসে গাছ হয়ে দুলছি। আর দূরে একটা মন্দির দেখতে পাচ্ছি, ভেতরে শ্বেত-পাথরের দেবী-মূর্তি। আবার কখনো মনে হচ্ছে, আরও দূরে একটা প্রশান্ত মসজিদ। সন্ধ্যা, এখন মাগরিবের আজান হচ্ছে। একটা জায়নামাজ, আমার জন্যেই যেন পেতে রেখেছেন আম্মা। জায়নামাজটা বাতাসে দুলছে, আর চারপাশে সুরের আওয়াজ। যেন উম্মে কুলসুম। গতরাতে সারাক্ষণ এই উড়াউড়ি, উড়ে চলেছি, আমি উড়েই চলেছি
২০
তিনি যখন আমাদের ছোট মামার হাত ধরে
এলেন, তাঁকে সব ভাইবোনেরা মিলে কচি-মামানি বলে
ডাকতে শুরু করেছিলাম। তিনিও খুশি হতেন। তখন তাঁর বয়সও
কম। এরপর অনেক ঝড়-বৃষ্টি-আনন্দ-বেদনা আর বাড়ির পাশে
নদীটির শুকিয়ে যাওয়া। আমরা বড়ো হতে-হতে চারপাশের সবুজ
গাছগুলো কেটে ফেলা হল। সেখানে কারো-কারো ফ্ল্যাটবাড়ি
শপিং মল। আমাদের স্মৃতিতেও পুরনো বলে কিছু থাকতে
চাইল না। বাড়ি থেকে এদিক-সেদিক উড়ে-যাওয়া আমাদের
আর কচি-মামানি স্মৃতির নদী হয়ে
একেবারেই শুকিয়ে গেলেন। বাইরে তখন আগুন-গুলি-বোমা। আমরা
কেউই নিজের ঘর থেকে বেরুতে পারিনি
১৪
ঠিকমতো খেতে না-পাওয়া আমাদের কিশোরকালে মানুষের
মতো কিছু মানুষ দেখেছিলাম। বুকে বুলেটের আঘাত নিয়েও
তাঁরা কখনও কোনো আপোস করেননি; চারদিকে এখন শুধুই
কিছু হারামজাদা দেখি, আর পিল-পিল করে হেঁটে যাচ্ছে বুনো
শুয়োরের পাল
১১
বাগানে-বাগানে বসন্তের পূর্বাভাস, আর আমাদের অন্ধ
গায়কেরা এখন নায়ক সেজে একতারা হাতে
গান গাইছেন। চেনা রাস্তাঘাটও তারা এখন ভুলে গেছেন; এই
গাছতলায়, হাটে-মাঠে, গ্রাম-গঞ্জে
তাঁরা এখন বড়ো মানুষের খেদমতে ব্যস্ত। নদীতে বন্যা পথ-ঘাট
ডুবে যায়। এখন চেনা পথেও তাঁদের অনেকের ভয়
৪
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে চারপাশটাকে সালাম জানাই, দুনিয়ার সব মানুষ
একটু শান্তিতে থাকুন। সমুদ্র থেকে বাতাস উড়ে আসে, লণ্ডভণ্ড ঘরদুয়োরের
সঙ্গে তোমার কথাও ভাবি। ভাঙা গাছ, আর সেই গাছের ছায়ার নিচে
অচেনা সব পাখি। আমার শরীর-ভরা ক্লান্তি, হাত-পা সরে না
সৌভিক রেজা। জন্ম ১৯৭০। লেখাপড়া ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা অধ্যাপনা।