শিশুদের ব্যাপারে অভিযোগ : অনিচ্ছাকৃত ভুল
শিক্ষা দর্শনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত, ইতালীয় চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ মারিয়া মন্তেসরি (Maria Tecla Artemisia Montessori, ১৮৭০-১৯৫২)। তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় পাঠদান কার্যক্রমে অনুসরণ করে। শিশুদের উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির জন্যই তিনি বিশ্বব্যাপী আলোচিত ব্যক্তিত্ব। মন্তেসরি মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশু এবং নারী-অধিকার ও শিক্ষার পক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের মতামত প্রকাশের মাধ্যমেও ভূমিকা রেখেছেন।
১৮৯৬ সালে মন্তেসরি মেডিসিনের একজন চিকিৎসক হিসেবে রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তিনি ছিলেন ইতালির প্রথম নারী চিকিৎসক। শিক্ষাজীবনের শেষ দুই বছর তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি মনোচিকিৎসক হিসেবে গবেষণা করেন। এসময় রোমের কয়েকটি মানসিক আশ্রম পরিদর্শন করেন, সেখানে তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। যেটি তাঁর পরবর্তীকালের শিক্ষা-বিষয়ক কাজে প্রভূত সহায়তা করেছিল। তাঁর গবেষণাপত্র পলিক্লিনিকো জার্নালে ১৮৯৭ সালে প্রকাশ হয়।
মনঃসমীক্ষণ সাধারণত চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবেই পরিচিত। শিশুকে যথাযথভাবে বড় করে তোলার জন্য এই দার্শনিক ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবক এবং যারা শিশু শিক্ষার সঙ্গে জড়িত তাদের এই বিষয়টি ভালোভাবে আত্মস্থ করা দরকার। কেননা, শিশুর মানসিক বিকাশের সঙ্গে এর সম্পর্ক গভীর।
দ্য সিক্রেট অব চাইল্ডহুড মন্তেসরির শিশু শিক্ষা-বিষয়ক উল্লেখযোগ বই। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এটির প্রথম অধ্যায়ের ‘Accusation’ অনুচ্ছেদটি অনূদিত হল।
অনুবাদ : মিথিলা নৈঋত
বয়স্কদের মনস্তাত্ত্বিক বিশৃঙ্খলার গভীর উৎসের কথা বোঝাতে গিয়ে ফ্রয়েড ’অবদমিত’ মনের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে শিশুর বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে। বড়রা শিশুদের দমিয়ে রাখে বলে তার বিকাশমান সত্তা যেভাবে বেড়ে ওঠা প্রয়োজন তা ঘটে না। ’বয়স্কজন’ কথাটি বিমূর্ত ধারণা। শিশু সমাজ-বিচ্ছিন্ন থাকে, ফলে বয়স্কজন তাকে প্রভাবিত করে, তাহলে তিনি নির্দিষ্ট এবং সবচেয়ে কাছের বয়স্কজন—প্রথমে তার মা, তারপর তার বাবা, তারপর তার শিক্ষক।
শিশুর শিক্ষা ও বিকাশের দায়ভার বড়দের উপর ন্যস্ত করে সমাজ তাদের উপর আরেকটি দায়িত্ব আরোপ করেছে। অথচ, বিপরীত চিত্র এই যে, অভিভাবক ও মানবজাতির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে যাদের, তাদেরই বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু যেহেতু প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাবা, মা অথবা অনেক সময় শিক্ষক, শিক্ষিকা শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন, কাজেই এই অভিযোগ বয়স্কজনদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের সঙ্গে বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্রলয়ের ভবিষ্যৎবাণীর সাদৃশ্য আছে। শেষ বিচারের পরিণামের মতোই তা যেন রহস্যময় ও ভয়ানক :
‘সেইসব শিশুদের তোমরা কী করেছ, যাদের ভার আমি তোমাদের উপর ন্যস্ত করেছিলাম?’
এর প্রতিউত্তরে প্রথম প্রতিক্রিয়াটি আত্মরক্ষামূলক এবং একইসঙ্গে প্রতিবাদের : ‘যতটা ভালো করা আমাদের পক্ষে সম্ভব আমরা তা-ই করেছি। আমরা শিশুদের ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি।’ এই প্রতিক্রিয়ায় দুটি পরস্পরবিরোধেী দৃষ্টিভঙ্গি হাজির হয়। একটি সচেতন, অন্যটি উঠে আসে অচেতন অবস্থা থেকে। আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়টি আমাদের জানা। এটি বেশ পুরোনো, এর শিকড় খুব গভীরে এবং বিষয়টির প্রতি আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আকর্ষণীয় হলো ওই অভিযোগটি, যাদের ছবি মনের ভেতর আঁকা হয়েছে এই অভিযোগের মাধ্যমে। শিশুদের পরিচর্যা ও উত্তম শিক্ষা করার জন্য তারা রীতিমতো সংগ্রাম করেন, পরিশ্রম করেন। এক সময় উপলব্ধি করেন, সমস্যার জটিলতায় তারা আটকে পড়েছেন, কারণ তারা যেসব ভুল নিজেদের মধ্যে রেখে দিয়েছেন সেগুলো সম্পর্কে তাদের কোনোই ধারণা নেই।
…এই আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের দোষের কথা স্বীকার করে নেয়। এমন সব কঠোর ও তীব্র অভিযোগ অচেতনকে চেতনে ডেকে আনে। আসলে সব রকম আত্মিক উন্নয়ন চেতনারই কীর্তি, যে চেতনা একদিন ছিল তার বাইরের জিনিস সেসবই নিজের মধ্যে গ্রহণ করে নেয়। এভাবেই ধারাবাহিক আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটে।
শিশুদের পক্ষে কথা বলতে হলে সবাইকে বড়দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি ক্রমাগত জাগিয়ে রাখতে হবে। এ থেকে কাউকেই ছাড় দেওয়া যাবে না। ক্রমেই অভিযোগটি ব্যাপক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়; কেননা, তা শুধুমাত্র অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলোরই নিন্দা জানায়, যেগুলো সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অচেতন। এ কারণে সেসব আমাদের মর্যাদা বাড়ায় এবং নিজেকে জানার দিকে নিয়ে যায়। আর প্রতিটি যথার্থ প্রগতি এই জানা বা আবিষ্কার থেকেই আসে, আসে অজানাকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।
সব কালে নিজেদের ভুলের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরস্পরবিরোধী। সবাই সচেতন ভুলে মনক্ষুণ্ন হন আর অসচেতন ভুলের প্রতি আকৃষ্ট ও মোহিত হন। নির্দিষ্ট ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের বাইরে অগ্রগতির গোপন রহস্য নিহিত থাকে অজানা ভুলের মধ্যে, আর সেটিই আমাদের উচ্চতর জগতে উপনীত করে। যেভাবে মধ্যযুগীয় ’নাইট’ বা বীর যোদ্ধা তার সচেতন জীবনধারাকে আঘাত দিতে পারে এমন ক্ষুদ্রতম অভিযোগেই দ্বন্দ্বযুদ্ধে লড়তে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন, তিনিই আবার বেদীর সামনে নিজেকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বিনয়ের সঙ্গে বলতেন, ’আমি অপরাধী, সবার সামনে আমার অপরাধ স্বীকার করছি, সব অপরাধ আমার একার।’ বাইবেলে এই ধরনের পরস্পরবিরোধী ভাবের চিত্তাকর্ষক অনেক উদাহরণ আছে। কী সেই বস্তু যা জনতাকে নিনেভের যোনাহ্ (Jonah)-র চারপাশে টেনে এনেছিল যাতে স্বয়ং রাজা ও জনগণ আবেগাপ্লুত হয়ে দলে দলে রাস্তায় ভিড় করে সেই মহাপুরুষের পেছনে সামিল হয়েছিলেন? তিনি তাদের সবাইকে এমন ভয়ংকর পাপী বলে ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা ধর্মান্তরিত না হলে নিনেভ্ ধ্বংস হয়ে যাবে। কীভাবে জন-দি-ব্যাপ্টিস্ট জর্ডান নদীর তীরে সবাইকে তলব করেছিলেন, কোন আকর্ষণীয় শব্দাবলি ব্যবহার করে তিনি ওই বিপুল জনসমাবেশ ঘটিয়েছিলেন? তিনি তো তাদেরকে ‘বিষধর সাপের বংশ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
মানুষ দলে দলে যোগ দেয় নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনতে—এটি বিস্ময়কর ব্যাপার। এই আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের দোষের কথা স্বীকার করে নেয়। এমন সব কঠোর ও তীব্র অভিযোগ অচেতনকে চেতনে ডেকে আনে। আসলে সব রকম আত্মিক উন্নয়ন চেতনারই কীর্তি, যে চেতনা একদিন ছিল তার বাইরের জিনিস সেসবই নিজের মধ্যে গ্রহণ করে নেয়। এভাবেই ধারাবাহিক আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটে।
শিশুর নিয়মিত ও সাধারণ আচরণের পরিবর্তন বা ভিন্নতর আচরণ পেতে চাইলে প্রথম যে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, সেটি হল বড়দের আচরণের পরিবর্তন। শিশুর আত্মিক জীবন বিপন্নকারী সংঘাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হলে এটা খুবই দরকারি। মূলত, বড়রা যদি সাধ্যমতো সবকিছুই করে থাকেন—যেমন তারা বলেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও তারা শিশুকে ভালোবাসেন, তথাপি তারা মানবেন যে এক দুর্লঙ্ঘ্য সমস্যার মুখোমুখি তারা। সাধারণত জানা বিষয়ের বাইরে কী আছে তা জানার জন্য বড়দের অবশ্যই স্বতঃপ্রবৃত্ত ও সচেতনভাবে সন্ধানী হতে হবে।
এমনকি শিশুর মধ্যে অনেক কিছুই সুপ্ত থাকে, যেগুলো অজানা। শিশুর আত্মারও একটি অংশ সবসময়ই অজানা। সেগুলো জানা খুবই দরকার। শিশুর মধ্যেও আবিষ্কারের চাহিদা আছে, যা আমাদের অজানার দিকে নিয়ে যায়, কারণ মনস্তত্ত্ব ও শিক্ষার আলোয় শিশুকে পর্যবেক্ষণ করার পরেও সে অজানা রয়েই যায়। সে জন্য উদ্দীপনার মনোভাব নিয়ে আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে, যেমন মানুষ গুপ্তধনের খোঁজ করে, মূল্যবান ধাতুর সন্ধানে অজানা দেশ ও পাহাড়-পর্বত ঘুরে ফেরে। শিশুর আত্মার ভেতর লুকিয়ে থাকা অজানা সৌন্দর্যের সন্ধানে বড়দের এই কাজটি করতে হবে। জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাইকে এই কাজে অংশ নিতে হবে, তবেই মানবজাতির নৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদানটি আবিষ্কার সম্ভব হবে।
বড়রা এমন সব আচরণ করেন যেন তারা শিশুদের সৃষ্টিকর্তা, শিশুর সঙ্গে তাদের নিজেদের সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই শিশুদের কাজের ভালোমন্দ বিবেচনা করেন, বয়স্করাই যেন ভালোমন্দের উপযুক্ত বিবেচক, ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে, তারাই যেন সব ভালোটা বোঝেন—বয়স্কদের এসব দেখে শিশুরা নিজেদের গঠন করবে। শিশুরা বড়দের আচরণ থেকে আলাদা রকম যে বৈশিষ্ট্যই অর্জন করুক তাতেই যেন তাদের যত অপরাধ।
বয়স্করা শিশু ও কিশোরদের বুঝতে পারেননি, এ কারণেই দুই প্রজন্মের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিরোধ লেগে থাকে। এই পরিস্থিতি সমাধান এমন নয় যে, বড়দের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে কোনোকিছু শিখতে হবে অথবা আচরণের কিছু কিছু ঘাটতি পূরণ করতে হবে। তাদের আসলে একটি ভিন্নতর জায়গা থেকে শুরু করা প্রয়োজন। এতদিন যে অজানা ভুল বড়রা করে এসেছেন তা তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, কেননা এই ভুলের কারণেই শিশুরা ঠিক যেমন, বড়রা তেমনভাবে তাদেরকে দেখতে বা জানতে পারেননি। যদি এই প্রস্তুতি এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি তারা অর্জন করতে না পারেন, তাহলে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যেতে পারবেন না। আত্মজ্ঞানের অনুশীলন যত কঠিন মনে হয় আসলে তা তত জটিল নয়। কারণ সব ভ্রান্তি, যদি তা অচেতনও হয়, তার অর্থই হলো দুঃশ্চিন্তা, মানসিক যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ। আর এ সব প্রতিকারের একটি ইশারাই তীব্র তাগিদ সৃষ্টি করে। যেমন, কারো হাতের আঙুলের হাড় সরে গেলে তা যথাস্থানে সঠিকভাবে বসানো দরকার হয়, তা না করা পর্যন্ত ওই হাতে কাজ করা সম্ভব হবে না, যন্ত্রণারও অবসান ঘটবে না। একইভাবে, মানুষ যখন নিজের ত্রুটি বুঝতে পারে, তখনই নিজের বিবেককে যথাস্থানে দাঁড় করানোর প্রয়োজন অনুভব করে, কেননা সেই মুহূর্ত থেকে তার দীর্ঘ দিনের দুর্বলতা, দুর্ভোগ ও মানসিক কষ্ট অসহনীয় হয়ে ওঠে। একবার কাজটি করা হলে সবকিছুই তখন সহজ হয়ে ওঠে। একইভাবে যখন আমরা এই দৃঢ় বিশ্বাসে উপনীত হই যে আমরা অকারণে অনেক বেশি কৃতিত্ব নিজেদের উপর আরোপ করে ফেলেছি এবং বিশ্বাস করেছি যে আমাদের সীমা ও সম্ভাবনার অতিরিক্ত কাজ করার সামর্থ্য আমাদের আছে, তখনই আত্মার বৈশিষ্ট্যাবলি আমাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও শিশুদের বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্নতর বলে চিনতে পারি। সেটি যেমন সম্ভব, অন্যদিকে আমাদের জন্য তা বেশ আনন্দদায়ক।
শিশুর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে বয়স্করা অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক (egocentric)। অহংকারী (egofistic) নয়। কাজেই যা-কিছু শিশুর অন্তরসত্তাকে প্রভাবিত করে সেটিকেই তারা বিবেচনা করে নিজেদের সঙ্গে সম্পর্কের মাপকাঠি দিয়ে। এর ফলে শিশু সম্পর্কে তারা ভুল ধারণা করেন। এভাবে বিবেচনার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এই ভাবনায় গিয়ে পৌঁছায় যে, শিশুর সত্তা শূন্যগর্ভ, আর বড়দের দায়িত্ব হল নিজেদের উদ্যোগে তাদের ওই শূন্যতা পূরণ করা। শিশুরা সবাই যেন অচেতন ও অক্ষম প্রাণী, তাদের জন্য সবকিছুই করে দিতে হবে, কেননা তাদের সত্তার ভেতরে কোনো গোপন পথপ্রদর্শক নেই। বড়দের দায়িত্ব তাদের অবশ্যই বাইরে থেকে প্রতিটি সঠিক পদক্ষেপে পরিচালিত করবেন। তাছাড়া, বড়রা এমন সব আচরণ করেন যেন তারা শিশুদের সৃষ্টিকর্তা, শিশুর সঙ্গে তাদের নিজেদের সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই শিশুদের কাজের ভালোমন্দ বিবেচনা করেন, বয়স্করাই যেন ভালোমন্দের উপযুক্ত বিবেচক, ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে, তারাই যেন সব ভালোটা বোঝেন—বয়স্কদের এসব দেখে শিশুরা নিজেদের গঠন করবে। শিশুরা বড়দের আচরণ থেকে আলাদা রকম যে বৈশিষ্ট্যই অর্জন করুক তাতেই যেন তাদের যত অপরাধ। খুব তাড়াতাড়িই তাদের সংশোধন হওয়া চাই। আর এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি শিশুর ব্যক্তিত্ব অস্বীকার করে। এভাবে, এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে বড়রা তাদের কর্তব্যের উদ্দীপনা, শিশুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের মহিমা অনুভব করেন।
মিথিলা নৈঋত। বিজ্ঞানের দর্শন এবং শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভাবেন। শখের বসে অনুবাদ করেন। নিভৃতিযাপন, শীত আর লালনগীতি বিশেষ পছন্দ। কবিতা লেখেন।