কবিতা

অপার অক্ষর

ধূলির বাতাসে

যেখানে পরস্পরের ছায়ায় থাকে গুপ্ত নদী
আমরা ক্রমশ অচেনা হয়ে যাই—

পৃথিবীর যেকোনো রাস্তায় যেতে যেতে আলাদা হতে থাকি—
বলতে না পারার মতো আড়ষ্টতায়
লুকিয়ে রাখা হাঁসের পালকের নিচে রক্তপাত!

নিভৃত শোকের পাশে বয়ে চলা নদী
পুরোনো রাতের ঘ্রাণ মুছে ফেলে অযথা দিনের পারাপার—

এইতো সময়! ভেসে যায় অর্থ তার দূরের হুইসেলে—
আমরা ফেলে আসি পথ, আচ্ছন্ন জীবনের মায়া
গুড়ো গুড়ো ধূলির বাতাসে—

স্বীকার

কেউ পারে না লিখতে
তোমার হয়ে
তোমার জীবন

পাহাড় পারেনি পড়তে
চুপ থাকা মুহূর্তের স্বর

তোমারও ভুল ছিল
সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসা
অপার অক্ষর

সবটুকু জাগরণ দিয়ে
শুধু খুঁজেছ আলো

ঘুমের ভেতর
পাহাড়ের কোলে
সমুদ্র শুয়ে ছিল

কাটাকুটি হয়ে যায় সব
নীল এক পৃথিবীর ছায়া
অন্ধ আহত পরাভব

প্রতিটি ফেরার পথে
সূর্যের বদলে
নিজেকেই
ডুবিয়ে এসেছ কতকাল

তবুও হয়নি শেষ
ভালো না থাকার বিভ্রম!

ভঙ্গুর নিস্তব্ধতা

আর কিছু যদি না জানার থাকতো
তখন কেমন হতো পৃথিবী?
থেমে যেত সময়?

জানার আছে কিন্তু জানা নেই
এইসব বিমর্ষ প্রশ্নের উত্তর!

আর যদি কিছু না জানার থাকত
তখন মনেই আসত না
কেমন আছো তুমি,
অরণ্য,
পাহাড়,
পাহাড়ের খাঁজে নাম না জানা পথ—

আত্মার ভেতরের নিস্তব্ধতা কেন এমন হয়?

তরঙ্গ মুছে গেছে

নতুন কিছু বোলো—
এই আকাশ ভেঙে পড়ছে বোলো না;
বোলো না তুমি আমার কথা
বুঝতে পারোনি!
আমি তো পাশে বসে থেকেছি অনন্তকাল
তারপরও তরঙ্গ মুছে গেছে শুধু—
এই বাদামী ত্বক, ঘোলা চোখ, ধূসর চুলের ভাষা
রাত্রি জানে না কিছু।
আমরা কোনোদিনও একে-অন্যকে চিনিনি,
অন্তত এইটুকু বোলো—

রোদ ছুঁয়ে দেখো

এতোটাই অমীমাংসা যে যুক্তির শব্দে পৃথিবী
ভুলে যাচ্ছি! একটা সূর্যোদয়ের গন্ধ
আড়াল থেকে ডাকে—ওখানে পাখি উৎসব?
জংলী ফুল? সবুজ জলের দীঘি?
কুয়াশার খুব গভীরে কে চলে যায়! সময়?

একটা উৎসব-ফেরা রজনীগন্ধা টেবিলে শুকায়।

যে যার বাড়ি। ছায়াজমা উঠান। স্মৃতি।
শিউলি ফুলের আলো। সেইসব উত্তাপ—অবিকল
ভেসে যাচ্ছে তোমার আড়ালে—

পুনর্জন্মের আশায় না-থেকে ‘রোদ’ ছুঁয়ে দেখো।

ইতস্তত ঘুম

সেখানে কোনো শেষ কথা ছিল না—
কে বা কারা কার কথা শোনে!

তারচেয়ে পাহাড়ের অধীনেই
রেখে আসি মন;
এইসব আধিপত্য ও উত্তেজনা মুছে
সমুদ্রে বিলীন হবে যেতে চাওয়া
গন্তব্যের নাম—

পৃথিবীর ধার করা আলোয়
যারা খুব উজ্জ্বল ফুলের মতো ডাকে!
এসব হিসাব রাখা জরুরি নয়,
মহাশূন্যে একটা বিন্দু কতদূর যায়?

এমন অজস্র সমুদ্রস্নান শেষেও
শরীরে লেগে থাকে মৃত্যুর দাগ!
সময় কেটে যায় নিজের ভেতরে
কী আশ্চর্য ভারী—অপার নিরুত্তাপ!

লেখাটি শেয়ার করুন :

শ্বেতা শতাব্দী এষ

শ্বেতা শতাব্দী এষ। জন্ম ১২ অক্টোবর, ১৯৯২, জামালপুর শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত কবিতার বই: অনুসূর্যের  গান  (২০১০), রোদের পথে ফেরা (২০১৩), বিপরীত দুরবিনে  (২০১৬), আলাহিয়ার আয়না (২০১৭), ফিরে যাচ্ছে ফুল (২০১৯, কলকাতা)। 'বিপরীত দুরবিনে' বইয়ের জন্য 'আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ এবং তরুণ কবি ক্যাটাগরিতে 'আদম সম্মাননা ২০১৯'  পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!