জসীমউদ্দীনের দুষ্প্রাপ্য কবিতা
জসীমউদ্দীনের দুষ্প্রাপ্য শিরোনামহীন এই কবিতাটি রচিত ও মুদ্রিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান এবং মাহবুব হোসেন খানের বিয়ে উপলক্ষে। তাদের পরিণয় স্মরণীয় করে রাখার প্রয়াসে ‘আশীর্বাণী’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা মুদ্রিত হয়। আমরা কবিতাটি ‘আশীর্বাণী’ শিরোনামে প্রকাশ করছি।
পুস্তিকাটির মুদ্রণপৃষ্ঠায় রয়েছে গায়ে হলুদ ও বরযাত্রার তারিখ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য। তাতে উল্লিখিত, ‘গায়ে-হলুদ : পয়লা ফাল্গুন, চৌদ্দই ফেব্রুয়ারী, রবিবার; দোসরা ফাল্গুন, পনেরই ফেব্রুয়ারী, সোমবার।। বিবাহ : ইস্কাটন লেডীজ ক্লাব, ঢাকা, তেসরা ফাল্গুন, ষোলই ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার, সন্ধ্যা সাতটা।। বরযাত্রী-জমায়েত ও রওয়ানী : ‘উত্তরমেঘ’, তিনশ’ পঁচাত্তর/এ- সড়ক উনত্রিশ, ধানমণ্ডী আবাসিক এলাকা, ঢাকা, পাঁচই ফাল্গুন, আঠারই ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা সাতটা।। সন : তেরশ’ সাতাত্তর, উনিশ শ’ একাত্তর।।’
উপর্যুক্ত তথ্য থেকে জসীমউদ্দীনের এই আশীর্বাণী রচনার সময়কাল অনুমান করা যায়। ৭.৫/৫ ইঞ্চি মাপের পুস্তিকাটি আর্টপেপারের একটি কভার ব্যতীত ৬৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত। এর ১০ নম্বর পৃষ্ঠায় কবিতাটি মুদ্রিত হয়েছে। প্রতি পৃষ্ঠার মধ্যবর্তী অংশে হালকা হলুদ বর্ণের আলপনার উপর বেগুনি রঙে আশীর্বাণীগুলো ছাপা হয়েছে।
পুস্তিকায় তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিক-অধ্যাপক, সংস্কৃতিজন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আশীর্বাণী লিখেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন কাজী মোতাহার হোসেন, বেগম সুফিয়া কামাল, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মুনীর চৌধুরী, বন্দেআলী মিয়া প্রমুখ।
কবিতাটির নিচে কবির নাম মুদ্রিত হয়েছে ‘জসীম উদ্দীন’ বানানে। হতে পারে বর্ণবিন্যাসে সহায়তাকারীর অসাবধানতাবশত কবির নামের এই বানান-বিভ্রাট ঘটেছে। তবে কবিতাটির শব্দ নির্বাচন এবং ছন্দ ব্যবহারের রীতি থেকে নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে এটি জসীমউদ্দীনেরই রচনা।
বাংলা সাহিত্যে তিশোত্তর আধুনিক কবিতার বিপুল বৈভব ও প্রভাববলয়ে থেকেও জসীমউদ্দীন সরল, সমর্পিত এবং আপন আনন্দে বিভোর চিরায়ত বাঙালির প্রাকৃতজনের গাথা রচনা করেছেন। তিনি কবিতায়, ছন্দে, উদগ্রীব, আবেগমথিত অনন্ত জীবনের অন্তর্লীন আগুন যে চুম্বন চিহ্ন এঁকেছিলেন, ঔপনিবেশিক অন্ধকারে তা যেন ছিল রক্তাক্ত শব্দগুঁড়োর মতো আত্মপরিচয়ে দীপ্ত ও মুখরিত। শিরোনামহীন এই কবিতাটিও কবির আত্মস্বভাব-শিশিরে উজ্জ্বলিত।
সংগ্রহ, সম্পাদনা ও ভূমিকা : জোহা আজাদ
আশীর্বাণী
তোমাদের তরে রাখিয়া গেলাম
মাঠের সোনার ধান,
কথার কুসুমে ভরিয়া গেলাম
ভালবাসা-ভরা প্রাণ।
তোমরা রহিবে আমি রহিব না,
আজিকার গড়া বাঁশী
তোমাদের দিনে ভরে দেয় যেন
গৃহভরা সুখ-হাসি।
লেখাটি শেয়ার করুন :
জোহা আজাদ। সাহিত্যসমালোচক। শিল্পকলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক রচনাও লেখেন।