খানবাহাদুরের কবিতা
১
বাইরে, শহরে কি বৃষ্টি আছে?
দুপুরবেলা সাঁতার দিতে ফ্লোরাল মাদুরে
টাটকা কৈমাছ নিয়ে আসলাম
তোমার ঘরে,
একটা টিনেজার তেলরঙ সবিস্ময়ে চোখ মারে
সকালের ভারে আক্রান্ত
চরম ওলন্দাজ আয়নায়
আমি দেখি পারদের উঠানামা
চোখ বেঁধে ফেলেছি এখন তাই
পোষা খরগোশের নরম মাংস
রান্না হবে না যদিও
স্পর্শকাতর ব্যাগপাইপার টিপটিপ বর্ষা
বাইরে— শহরে,
যদি রোদ ঘটে থাকে
তীব্র রসনার র
উরু ও ভাবনা রেখে
দাঁতগুলি নিয়ে ঘুরলাম শুধু শুধু
২
রাস্তার ‘পরে চাঁদ দেখে আমি উতলা,
রাস্তার ধারে খন্দের ভিতর
যেনবা গ্রামোফোন কাটাসুরের ব্রিজে
নজরুলের গান শুনছো হে রসিক মহাজন
রাস্তাফারা’য়ান দাশু জীদা জীদা করে
হায় কলা ধরে ঝুলে তবু থাকল মার্কেটে,
চাঁদ তো দেখেনি।
রাস্তার পাশে খন্দের ভিতর কত গান ও বাজনা হয়
কিন্তু কথার পরে কথা
যেমন রথা, যথা তথা
ধরেই ঝুলে আছো বিরল ব্যাঙমাছ,
প্রজাপতি ধরে ধরে খাওয়ার ধান্দাতে৷
আলেক, রাস্তার ‘পরে
চাঁদনী দেখে হলাম উতলা,
তুমি পার করো আমারে।
৩
ঝিলের ধারে নৌকা থামাইছি এখন
লালাখাল সিলেটে তাই শ্রীহট্ট যাই
সন্ধ্যাতারার নিচে মধু খাব
তোমার আম্মার ম্যাগনাম ওপাস থেকে
দেয়ালে ঝুলানো তটরেখা,
আর লাল পথ ধরে যখন
টিলার মাঝে চলছে বয়ে স্বরবৃত্তের ঢেউ
ঘেউ করে ওঠে কুত্তা,
বুক বরাবর ধরে রাখলাম ওকে
তুই বাচ্চা আমার, তু তু চুক
রিরংসার নাম ধরে ডাকলাম কত
ময়নার সন্ধানে খাঁচার দোকানে
যেহেতু পানের ভিতর থাকে জর্দা
কৌটার গভীরে রেখে আলজিভ পর্যন্ত
একালিফ ধরে থাকা সরগম শুনাব
তাই ঝিলের ধারে নৌকা থামাইছি এখন
৪
আমরা দুইজনাই গ্রামে থাকি বিধায়
দেখিনা কাউকে
নারিকেল গাছে কোকিলছানা তো দেখি
বসন্তের দেয়ালে,
ঝুলে থাকে দেখি কলাও শিল্পের মতো
এই গ্রামে তালগাছ নাই
বিধায় ঐ গ্রামে যাইতেই হয়,
আবার কখনো চুপচাপ বিকালের রোদ পিঠে
শহরের নিরাবরণ পেটের উপর সাঁতার কেটে
গ্রামের আনন্দ করে থাকি।
আমি ঐ গ্রামের চোখ নিয়া
এই গ্রামে অন্ধ হয়ে যাব, ও খোদা।
৫
একটা বোবা লোক বিরিয়ানি বেচতেছে
বাতাসে বিরিয়ানির গন্ধ
অন্যসময় হইলে আমি পিতা নিষাদের মতো ছুটে যাইতাম
কিন্তু এখন এই গন্ধে বমি পাইল
কারণ মিষ্টি একটা গন্ধ আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতেছে
গন্ধটা মাংস, আলু ও ঘি-বিরোধী
বিশদ প্লাস্টিক,
আমি বনফুলের ভক্ত
তাই জঙ্গম বোধের শিকারি
দুপুরের রোদে উর্দু জবান শুনতে এসেছি।
শায়েরি লিখতে চাই বলে ধরা খাই
এরচে সহজ কথায় ঘটনাটা বললে সুবিধা ছিল কি না
সব জটিল করি বলে কবিতা লিখি,
যেমন শঙ্খ, দাশ, কখনো-বা গুপ্ত করেছেন
ঘোষ মানে আছে মিষ্টির দোকান
এবং ঘন রসমালাই
আমি করতে চাই
একটা সবুজ মেশিন
সকাল, সন্ধ্যা, আর চারশোবিশ রাতে
যা দেখতেছে— বিকলহীন,
উদয়াস্ত যেন লিখে যাইতে পারে।

আজমাঈন তূর হক
ঢাকায় বসবাস করেন। চৈত্রমাসের বৃষ্টি, অস্তিত্ববাদী দর্শন ও শিক কাবাব পছন্দ করেন। কবিতার বই ‘বনের দিকে’।