কুণ্ঠিত বসন্ত মাতাল
যাপন
ফুলের শরীরে কোনো ফাঁদ পাতা নেই
ভ্রমর আসে
তারা ফুলের মধু খায়, জীবন ভরায়।
আমরা জানি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত
প্রবাহমান নদীর মতো
আনন্দে বয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
এখানে তুমি মানুষের বয়ানে তৈরিকৃত ফাঁদে
পা দিলেই আটকা পড়বে, তোমাকে অভিনয় করতে হবে।
নিজের জগৎ থেকেই ছিটকে যাবে তুমি।
তার‘চে দেখে যাও ফাঁদ পাতা মানুষ—
স্থায়ী মেমোরিতে রাখতে চেয়ো না তাকে,
ভুলে যাও।
উড়তে থাকো উদ্দেশ্যহীন পাখিদের সাথে।
সব শান্ত যখন
সব শান্ত যখন, তখন প্রকৃতির গভীর তরঙ্গে
ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নেই।
অরণ্যআঁধার তোমাকে চেনে।
ক্ষয়ে আসা হাড়ের নিচে জলের শব্দ মুছে গেছে।
তবু জীবনস্মৃতির অপেরা পার হয়ে
তুমি গড়ে তুলেছ যে ধুলোর স্মরণি, সেখানে মৌন বন ময়ূর,
বৃক্ষের অবয়ব জুড়ে ক্ষতচিহ্ন এঁকে গেছে কারা
জানি না। ঘুমন্ত মেঘের ওপর
নেচে চলেছে তবু বিরহে কাতর সমস্ত রমণী।
অসন্তের স্বীকারোক্তি
কামিনীর দিকে চেয়ে থেকে থেকে জীবন ফুরাই।
মুক্ত করে দিয়ে তুমি আজ উদাসীন বাতায়নে
পাতাঝরা ভোরস্মৃতি থেকে একে একে খুলে দিচ্ছ
যৌথ বাঁধনের মায়া। দূরে ভাঙা মুকুটের তলে
পড়ে আছে সিঁথিপথ, সত্য কথকের ধ্বস্ত সিঁড়ি।
নীরবে নদীর ভাষা এখন বুঝতে পারো তুমি,
নিরুদ্বেগ দৃষ্টি মেলে ছুঁতে পারো ঘুমের ভঙ্গিমা।
ক্ষতবিক্ষত মুখের ছায়া এখন আর দেখা যায় না।
বনমর্মর
রক্ত শুষে নাও তবু গুপ্তপথ শেষে
রহস্যটিলার পাশে এসে সফল ক্ষমার মতো
সবুজ ডানার দিকে উড়ার ক্ষমতা
ফিরিয়ে দিও আবার
প্রণয়ীর নাম ধরে ডেকে উঠুক সূর্যাস্ত মথ
গভীর অরণ্যে
দৃষ্টিচোরা কাছে এসে বলুক তুমি বনমর্মর
কুণ্ঠিত বসন্ত মাতাল
কারা যেন মুছে দিচ্ছে পুনরায়
পূর্ব-পুরুষের করোটির মাপ।
কামারশালায় ফিরে যেতে যেতে
মনে পড়ছে তোমাকে চিনি
তুমি আমাদের সেলাইকলের ব্যথা।
গোপন স্নানঘরে উন্মূল হাওয়া
তোমাকে চিনতে পারেনি
তোমাকে সাজিয়ে রেখেছি আমি
তুমি আমার বাসনার শিলাস্তর।
তোমাকে ঘুমন্ত জানালার রঙে
এঁকে রেখেছে দূর কোনো বনমর্মর
তাকে ধরে রাখো
পথের শেষে সেই তোমাকে তুলে রাখবে
সৌধচূড়ায়
সে আমাদের অজস্র মার্বেলের হাসি
কুণ্ঠিত বসন্ত মাতাল

মুক্তি মণ্ডল
মুক্তি মণ্ডল, জন্ম ২২ জুলাই ১৯৭৬, চুয়াডাঙ্গা। সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক (১৯৯৭) এবং স্নাতকোত্তর (১৯৯৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একটি অসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রকাশিত বই : ঘড়ির কাঁটায় ম্যাটিনি শো (২০০৮), পুষ্পপটে ব্রাত্য মিনতি (২০০৯), উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি (২০১১), ভেল্কিবাজের আনন্দধাম (২০১৫) যাচনার বাঞ্ছাধ্বনি (২০১৮)।