ইয়ান্নিস রিটোসের কবিতা
গ্রিক আধুনকি কবি। ইয়ান্নিস রিটোসের জন্ম মে ১৯০১, গ্রিসের মোনেমভাসিয়ায়। উনিশ শতকের গ্রিসের পাঁচজন বিখ্যাত কবির তিনি একজন। ছোটবেলা ভীষণ কষ্ট আর দারিদ্র্যে কাটে। তাঁর বড় ভাই যক্ষায় মারা যায়। বাবা অর্থনৈতিক কষ্টে, যক্ষায় ভুগে স্যানাটোরিয়ামে মারা যান। তিনি নিজেও যক্ষায় ভুগে, বছর চারেক স্যানাটোরিয়ামে ছিলেন। রিটোস ১৯৩১-এ কমিউনিস্ট পার্টতে যোগদান করেন। তাঁর লেখা কবিতায় তাঁর জীবন ও মতাদর্শের ছাপ পাওয়া যায়। প্রথম কাব্য গ্রন্থ অ্যাপিটাফিওস, গ্রিস সাহিত্যে ঐতিহ্য থেকে সরে এসে নতুন আঙ্গিকে লেখা কবিতা, যার মূল মেসেজ ছিল জনগণের একতা, ঐক্য। ডানপন্থী সরকার এই বইটিকে এথন্সে জনসমক্ষে পুড়িয়ে ব্যান্ড করে। এ কারণে গ্রিসে তাঁর কবিতা নিষিদ্ধ ছিল, অবশ্য পরে তা আর থাকেনি। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ―দ্যা সং অফ মাই সিস্টার, সিম্ফনি অফ স্প্রিং। তিনি লেনিন পিস পুরস্কর পান, যা তাঁর কাছে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য ছিল। মারা যাবার পর তৎকালীন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সরকার তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে সমাধিস্থ করে।
―অনুবাদক
অ্যালিমেনি
সে, যে প্রথম রাতটি শুয়েছিল একজন ঈশ্বরের সাথে, না জেনেই
―একমাত্র কারণ তার ভারী কাঁধ আর চওড়া বুক,
তার স্বামীরও একই রকম রোমশ বুক, তার সাথে ঘুমায় একইরকমভাবে না জেনেই,
কিছু ভাবা, কিছু অনুভব করা যায়, সে এখন ঘুমাতে কেমন
একজন মর্তের লোকের সাথে? আর সে কি খেয়াল করে অ্যাম্ফিট্রায়রের উপস্থিতি, অথবা
তার বারোতম শিশুর প্রসব বেদনায় এবং তার অমরত্বে, অথবা সেসবে
তার কিছুই কি যায় আসে? সে
স্মরণে রাখে কেবল একটি রাত, অপেক্ষা করে কেবল একটি রাতের জন্যই,
আবার, দেরী, সেই মুহূর্ত
যখন বাইরে বাগানে বড় ডুবুরি ডুব দেয়, কালপুরুষের নিকটে
তার রুপালি কাঁধ দেখায় (ওহ ঈশ্বর গোলাপের ঘ্রাণ এত মিষ্টি!)―
সে, তৈরি হয়, যতটা সে পারে, যখন তার স্বামী গেছে
শিকারে, সবসময় তৈরি স্নান সেরে,
নগ্ন, তার অঙুরীয় রাখে আবার, তার ব্রেসলেট, আর সে
সময় নেয় আয়নার সামনে
আঁচড়ায় তার দীর্ঘ চুল, এখনও ঘন, যদিও তাতে জীবন নেই এবং মৃত।
পুনরাগমন
তারা পৌঁছাল একটি দীর্ঘ সারিতে, রাতের বেলায়, যাদেরকে খুন করা হয়েছে।
তারা চারপাশে তাকাল, চাবি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল,
বাড়ির ভেতর ঢুকল, অন্ধকার খুঁজল কিন্তু পেল না কিছুই।
তুমি বিছানার নীচে। সেই বিছানা
যার উপরে তোমার শোবার কথা, এখন তুমি
তোমার পিঠের ওপর ঝোলানো। আর পর্দার আড়ালে
দাঁড়ানো জানালার ছায়া ক্রুসিফাইড।
মৃতদের কোনো ধারণা নেই কেন তারা মারা গিয়েছে।
মৃত্যুর পোর্ট্রেট
সূর্য নামাতে না নামতেই,
তারা মৃতদেহটিকে বহন করে নিয়ে এলো সমুদ্রের ধারে
একটি প্রতিফলন―সোনালি, বেগুনি গোলাপি রশ্মি ছড়িয়ে পড়ল দিগন্তে
আর অর্ধবৃত্তাকার বালির স্তূপের ওপরে,
আর এটি ছিল আশ্চর্যজনক―
সেই আভা আর এই মুখগুলো মৃত নয় মোটেও। বিশেষ করে
তাদের শরীর, তারুণ্যপূর্ণ, সংবেদনময়, সুগন্ধভরা জৌলুসময়
ভালোবাসার জন্য। তাঁবুর ভেতরে পরিত্যক্ত রেডিও বেজেই চলেছে আপনমনে, রাজকীয় মার্চ
পৌঁছেছে এখানে নির্বিঘ্নে, যখন গোধূলির আভা
গোলাপি হয়ে মরে গেল পায়ের আঙুলের নেলপালিশে আর ইউমেলোসের শিল্ডে।
থ্যাংকস
তুমি কখনো আমাকে থ্যাংকস বলোনি
এ কারণে যে তুমি তোমার হার্টবিটকে থ্যাংকস জানাওনি
যে তোমার জীবনের ছবিকে ফুটিয়ে তোলে।
তবে আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাব
কারণ জানি আমি, কতটা ঋণী আমি তোমার কাছে।
সেই থ্যাংকস হল আমার গান।
আমরা অপেক্ষা করি
আমাদের প্রতিবেশীদের ঘরে ধীরে ধীরে নেমে আসে অন্ধকার। ঘুমাতে পারি না আমরা
দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করি আমরা। অপেক্ষা করি
কারণ সূর্য টিনশেডের ওপর প্রতিফলিত হয় হাতুড়ির মতো,
আমাদের কপালে, হৃদয়ে আঘাত করার জন্য,
একটি শব্দ তৈরি হবার জন্য, সে শব্দ শোনার জন্য―একটি
ভিন্ন ধরনের শব্দ…
কেননা নীরবতা যেন বন্দুকের শব্দপূর্ণ অজানা কোনো
স্থান থেকে।
সারাংশ
জানালাটি একা
এই তারাটি একা
টেবিলের ওপর পুড়তে থাকা ভুলে ফেলে যাওয়া সিগারেট
ধোঁয়া, ধোঁয়া নীল, একা।
আর আমি একা, সে বলল,
আমি সিগারেট ধরাই, ধোঁয়া ওড়াই
সিগারেটের ধোঁয়ায় ধ্যানস্থ হই। আমি একা নই।
[গ্রিক হতে ইংরেজিতে ভাষান্তর : অ্যাডমন্ড কেলি]

আয়শা ঝর্না। কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও এম এড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পেশা শিক্ষকতা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : আঁধার যান (১৯৯৬), মাত্রমানুষ (২০০৩), উনুনের গান (২০০৫), আয়না রক্ত হল্লা (২০০৭), বাতাস তাড়িত শব্দ (২০১০), শূন্য ও পৃথিবী (২০১৭), গোলাপের নাম মৃত্যু (২০২১), লিখো জন্ম লিখো আয়ু (২০২২)। গল্পগ্রন্থ : চারকোল (২০০৮)। অনুবাদ গ্রন্থ : সিলভিয়া প্লাথের এরিয়েল (২০১০), নারীস্বর (২০১৩), সি পি কাভাফির কবিতা (২০১৯)। প্রবন্ধ গ্রন্থ: শিল্প ও নারীসত্তা (২০১৩)।