প্রবন্ধসাহিত্য

রাগভিত্তিক চর্যাগানের সুর-প্রসঙ্গ

চর্যাপদ মূলত যে চর্যাগান অর্থাৎ বৌদ্ধ সহজিয়া সংগীত এ বিষয়টি বুঝতে পারলেও কোনো যৌক্তিক সূর-সড়কের ইশারা দিয়ে যেতে পারেননি ১৯০৭ সালে চর্যাপদের অর্থাৎ চর্যাগানের আবিষ্কারক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ্রী মহাশয় নিজেই। ঐ পাণ্ডুলিপির প্রতিটি পদের শীর্ষে রাগ উল্লেখ ছিল যে কাজটি সাধারণত কোনো সংগীতের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের তৎকালীন জীবনাচার বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় যে তারা সোমপুর বিহার থেকে যখন ধীরে ধীরে তিব্বতের দিকে স্থানান্তর হচ্ছিলেন সে সময় তারা যে কয়েকটি পুঁথি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন তার অন্যতম এই চর্যাপদ। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পরে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদ পড়ানোর দায়ভার গ্রহণ করেন এবং সেই সময় থেকে অদ্যবধি চর্যাপদের সমাজচিত্র, সাহিত্যমূল্য কাব্যচিন্তা এই বিষয়গুলোই আলোচিত হয়ে এসেছে। তারপর দীর্ঘকাল অতিবাহিতের পরও আলোচনার আড়ালে দুটি বিষয় রয়ে গেছে এ পর্যন্ত। তার একটি হচ্ছে চর্যাগানের সংগীতচিন্তা, অপরটি হচ্ছে এই গানের আড়ালে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের সাধন ভজনের গোপন রীতিনীতির ইশারা বা সাংকেতিক প্রকাশ। ধারণা করা যায় এই চর্যাপদের প্রতিটি পদেই বৌদ্ধ সহজিয়া আর সাধন চর্চার রীতিনীতি লুকায়িত যা তৎকালীন সময়ের সিদ্ধাচার্যগণ নিজেদের জীবনের মর্মে প্রয়োগ করেছেন। বর্তমান সময়ের বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের জীবনযাপনের ধারাপর্যায় লক্ষ্য করলে এ বিষয়টি সহজেই অনুমেয় হয়। বাদ পড়ে রইল আরেকটি বিষয়ে সেটি হচ্ছে চর্যাপদ যে মূলত চর্যাগান এই বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত রূপে উপস্থাপন করা, সঠিক রাগে সুরারোপ করা এবং সঠিক গায়কীর মাধ্যমে জনমানুষের সম্মুখে তুলে ধরা। এই বিষয়টি আশ্চর্যজনকভাবে গত ১০০ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবেই চর্যাগানকে তার প্রকৃত স্বরূপে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটি করার ক্ষেত্রে এযাবৎকাল একেবারেই উদাসীন ছিলেন এই দেশের তথা এই উপমহাদেশের সংগীতজ্ঞগণ।

মানব মনের ভাবগতিময়তা আর ঐকান্তিক, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যা সেটিরই একমাত্র অবস্থার নিবেদন এমনই যে তা আসলে ভাষায় প্রকাশের অতীত। তা আসলে অনেকটা ভাবের অনুগামী নয়। নয় সেটি কোন সুরের সম্মোহনের মতো। সে যেন এক তন্দ্রাচ্ছন্ন হৃদয়ের সঙ্গে অনন্য আহবানে সাড়া দেয়া, হৃদ-মাল্যের নিবিড় বন্ধন, সেটি ব্যাখ্যা করার উপাদানে গড়া নয়। এই হল সত্য―চর্যাসুর। সুর ছাড়া এর ব্যাখ্যা কী-ই বা হতে পারে? কিংবা এই চর্যাসুর আসলে কী?

চর্যাপদের সংগীতরূপে সুরারোপ ছিল মাতৃকা উপাসক সহজযানের অনবদ্য অভিজ্ঞানরূপ সুউচ্চের ধ্যান। চর্যাপদের একটি পদে উল্লেখ রয়েছে: নৈরাত্মা মাতৃকা শূন্যতার হেরুকবীণা বাদনে রত। তাঁর বীণার তুম্ব মেরুগিরি। হিমাদ্রি বীণার দণ্ড। চন্দ্রনাড়ি ও সূর্যনাড়ি বীণার তন্ত্রী। সংগীতের সাথে সাধনতত্ত্বের এ এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

ভারতীয় সংগীত-শাস্ত্রের প্রাচীন রাগ অনুসরণ করে চর্যাগানকে সাজিয়েছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। কেননা তারা তৎকালীন সংগীত-শাস্ত্র বিষয়ে উচ্চশ্রেণির প্রাজ্ঞ পণ্ডিত তো ছিলেনই সেই সাথে ছিলেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নানামুখী উত্থান-পতন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সুতরাং, তাদের সৃষ্ট এই অমর সৃষ্টির গায়কীঢঙ পুনরুদ্ধার চরম দুরুহ বটে কিন্তু অসম্ভব নয় এটি প্রমাণ করেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ।

চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যাভাষা, কিন্তু এর গীতরীতি মোটেও সান্ধ্য নয় বরং আরো গভীরের এক অতীন্দ্রিয় ঘোর। এজন্যই সাধনতত্ত্বের মতো চর্যাপদের গীতিরূপও বাঙালির এক স্বর্ণময় অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। চর্যাচর্যবিনিশ্চয়ের পদগুলোর প্রতিটিরই নিজস্ব রাগ রয়েছে তার সাথে রয়েছে প্রহরের এক মায়াবী দোলাচাল। এই রাগগুলোর অধিকাংশই ছিল গৌড়ীয় সংগীতের সুবিশাল কিন্তু অধুনালুপ্ত ভাণ্ডারের অন্তর্গত। এর মধ্যে বেশ কিছু রাগ পুরো ভারতের কোথাও প্রচলিত নেই। গত শতাব্দীর দীর্ঘ ত্রিশ বছরের নিগূঢ় সাধনা দ্বারা সবগুলো রাগের স্বরলিপিকে বাস্তবরূপ দান করেন আলীম মাহমুদ। এখানেই তিনি শেষ করেননি তাঁর কাজ। তিনি সেই দুরুহ পদগুলো গেয়েছেন নিজ কণ্ঠে। তুলে ধরেছেন চর্যাগানের সত্যিকারের রাগভিত্তিক গায়কী, সুর-স্বরলিপি এবং অতীন্দ্রিয় চর্যা-ঘোরের চারপাশ। প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে দীর্ঘকাল সুপ্ত থাকা, লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা সেই বিশাল সুর-সমুদ্রকে জনসম্মুখে তুলে ধরা সম্ভব হল! খুব সহজ এই প্রশ্নের উত্তর তারাই জানেন যারা শাস্ত্রীয় সংগীতের রাগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন। ভারতীয় সংগীত-শাস্ত্রের প্রাচীন রাগ অনুসরণ করে চর্যাগানকে সাজিয়েছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। কেননা তারা তৎকালীন সংগীত-শাস্ত্র বিষয়ে উচ্চশ্রেণির প্রাজ্ঞ পণ্ডিত তো ছিলেনই সেই সাথে ছিলেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নানামুখী উত্থান-পতন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সুতরাং, তাদের সৃষ্ট এই অমর সৃষ্টির গায়কীঢঙ পুনরুদ্ধার চরম দুরুহ বটে কিন্তু অসম্ভব নয় এটি প্রমাণ করেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ।

এ কথা সত্য যে, দীর্ঘদিন দাক্ষিণাত্যের সংগীতাচার্যদের দ্বারা গীত হওয়ার ফলে এই রাগগুলোর পাল ও সেনযুগের বিশুদ্ধ গৌড়ীয় রূপটি পরবর্তীকালে নিরূপণ করা ছিল সত্যিই দুঃসাধ্য। পাল ও সেনযুগের বাঙালির সাথে রাষ্ট্রকূট ও চালুক্যদের সূত্রে দাক্ষিণাত্যের নিবিড় সংযোগ ছিল এবং তুর্কি আক্রমণের সময় গৌড়ীয় সংগীতের ধারার এক অংশ সেই সূত্রেই দাক্ষিণাত্যে উপনীত হয়েছিল; এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন সংগীতজ্ঞগণ। সৌভাগ্যক্রমে সেনযুগের ঠিক পরেই কর্ণাটের সংগীতাচার্য নিঃশঙ্কশার্ঙ্গদেব ‘সঙ্গীতরত্নাকর’ নামক গ্রন্থে এই গৌড়ীয় রাগসমূহের বিশদ বিবরণ দিয়েছিলেন যার মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া রাগগুলোও ছিল। চর্যাপদে যে রাগগুলো পাওয়া যায় সেসব হল : পটমঞ্জরী, গৌড়, অরু, গুঞ্জরী, দেবক্রী, দেশাখ, ভৈরবী, কামোদ, ধনসি, রামক্রী (রামকেলি), বরাড়ী, ইন্দ্রতাল, শবরী, মল্লারী, মালসী (মল্লশ্রী?), মালসী গৌড়, কাহ্নু গুঞ্জরী ও বঙ্গাল।

চর্যাগানের প্রথম পদকর্তা লূইপা এবং প্রথম পদ―

‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চীত্র পইঠা কাল।। [ধ্রু]।।’

এই পদটির শীর্ষে রাগ-পটমঞ্জরীর উল্লেখ রয়েছে। পটমঞ্জরী রাগ-এর বিশ্লেষণ করলে আরোহন পর্যায়ে ৬টি স্বর এবং অবরোহন পর্যায়ে ৮টি স্বরের দৃঢ় উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই রাগের জাতি-ঔড়ব-সম্পূর্ণ এবং গীত হবার সময়-রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। চর্যাগানে সর্বাধিক ব্যবহৃত এই রাগের ক্ষেত্রে কেন রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর নির্ধারণ করলেন চর্যাকারগণ? এই প্রশ্নের জবাব সহজ করে উত্তর দেওয়া যায় বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের সাধন-ভজন সম্পর্কিত বিষয়াদি থেকে। নিশ্চয়ই দিন এবং রাতের যে সময়ে ‘রাগ’ গীত হবার কথা সেই সময়টির অবস্থার সাথে সূর্য-চন্দ্র-তারা-গ্রহ-নক্ষত্র সর্বোপরি জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানামুখী হিসাব জড়িত রয়েছে। এটিই সারমর্ম। পাশাপাশি অন্য পদগুলোর ‘রাগ’ এবং প্রহরও আলোচনার দাবি রাখে।

আবিষ্কৃত সাড়ে ৪৬টি পদের প্রতিটির শীর্ষে ‘রাগ’ শিরোনাম উল্লেখ রয়েছে। মোট ব্যবহৃত রাগ সংখ্যা ১৬। পটমঞ্জরী, গউড়া, গর্জরী, অরু, গুঞ্জরী, দেবক্রী, কামোদ, দেশাখ, ধনসী, রামক্রী, বরাড়ী, শবরী, মল্লার, মালসী, মালসী-গবুড়া, ভৈরবী, বঙ্গাল। ধারণা করা হয়, পটমঞ্জরী রাগটিই সিদ্ধাচার্যগণের এবং তৎকালীন প্রেক্ষাপটে সর্বাধিক জনপ্রিয় ‘রাগ’ ছিল। কেননা, চর্যাগানের ১২টি পদ রচিত পটমমঞ্জরী রাগকে ভিত্তি করে। এছাড়াও অনান্য‘ রাগ’ এবং চর্যাগানে তাদের উপস্থিতি এবং প্রয়োগ সংক্ষেপে তুলে ধরা হল :

পটমঞ্জরী : এই রাগের ওপর ভিত্তি করে গীত হওয়া পদের সংখ্যা ১২। পদগুলো হচ্ছে-১, ৬, ৭, ৯, ১১, ১৭, ২০, ২৯, ৩১, ৩৩, ৩৬। লক্ষণীয় যে, বর্তমান সময়ে ও শাস্ত্রীয় সংগীতের অধিকাংশ রাগ এই পটমঞ্জরী আবহকে স্বীকার করে। এই রাগ-এর গীতকাল রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর।এই রাগ চর্যাগানের প্রবেশদ্বার। এই রাগ-এর জাতি ঔড়ব-সম্পূর্ণ।

আরোহণ : স র ম প ণ স

অবরোহণ : স ণ ধ প ম জ্ঞ র স

মল্লার : এই রাগের পদ সংখ্যা ৫। পদগুলো হচ্ছে- ৩০, ৩৫, ৪৪, ৪৫ এবং ৪৯। রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরে গীত এই রাগের জাতি ঔড়ব-সম্পূর্ণ।

আরোহণ : স র ম প ণ স

অবরোহণ : স ন স ধ প ম গ ম র স

ভৈরবী : এই রাগের পদসংখ্যা ৪। পদগুলো হচ্ছে-১২, ১৬, ১৯ ও ৩৮। এই রাগের গীতকাল- সকাল। জাতি-সম্পূর্ণ।

আরোহণ : স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ স

অবরোহণ : স ন দ প ম জ্ঞ ঋ স

কামোদ : পদ সংখ্যা ৪। পদগুলো হচ্ছে- ১৩, ২৭, ৩৭ এবং ৪২। গীতকাল- রাত্রির প্রথম প্রহর। জাতি-ঔড়ব-সম্পূর্ণ।

আরোহণ : স র প ম ধ স

অবরোহণ : স ন ধ প গ ম প গ ম র স

বরাড়ী : পদ সংখ্যা ৩। পদগুলো হলো- ২১, ২৩, ২৮ এবং ৩৪। চর্যাপদ-এ এই রাগের অপর একটি নাম বলাড্ডি। জাতি-ষাড়ব-সম্পূর্ণ। গীতকাল- দিবা চতুর্থ প্রহর।

আরোহণ : স ঋ গ হ্ম প হ্ম ধ স

অবরোহণ : স ন ধ প ম গ হ্ম গ ঋ স

শবরী : এই রাগে নিবন্ধনকৃত পদসংখ্যা ২। গানগুলো হচ্ছে ২৬ এবং ৪৬। জাতি-ঔড়ব-সম্পূর্ণ। গীতকাল-দিবা প্রথম প্রহর।

আরোহণ : স ঋ ম প দ স

অবরোহণ : স ন দ প ম গ ঋ স

গুঞ্জরী : চর্যাগানে এই রাগের অপরাপর নাম গুর্জরী বা কাহ্ন-গুর্জরী। পদসংখ্যা ৪। পদগুলো হল ৫, ২২, ৪১ এবং ৪৭।

আরোহণ : স ঋ জ্ঞ হ্ম দ ন স

অবরোহণ : স ন হ্ম জ্ঞ ঋ স

গউড়া : এই রাগে নিবন্ধিত গানের সংখ্যা ৩। গানক্রম- ২, ৩, ১৮। জাতি-ঔড়ব-সম্পূর্ণ। গীতকাল-সন্ধ্যাপ্রহর।

আরোহণ : স ঋ ম প ন স

অবরোহণ : স ন দ প ম গ ঋ স

দেশাখ : এই রাগে নিবন্ধিত গানের সংখ্যা ২। গানগুলো হলো ১০ এবং ৩২। জাতি-ঔড়ব-ষাড়ব। গীতকাল- বেলা দ্বিতীয় প্রহর।

আরোহণ : ন স ম র প ম ণ প স

অবরোহণ : স ণ প প ম জ্ঞ ম র স

রামক্রী : নিবন্ধিত গানের সংখ্যা ২। গানক্রম হলো ১৫ ও ৫০। জাতি-সম্পূর্ণ। গীতকাল- প্রাতঃকালের প্রথম প্রহর।

আরোহণ : স ঋ গ ম প দ ন স

অবরোহণ : স ন দ প হ্ম প দ ণ দ প গ ম ঋ স

মালশী : চর্যাগানে এই রাগের অপরাপর নাম মালসী গবুড়া। এই রাগে নিবন্ধিত গানের সংখ্যা ২। গানক্রম- ৩৯ ও ৪০। জাতি-সম্পূর্ণ। গীতকাল- দিবা চতুর্থ প্রহর।

আরোহণ : স গ হ্ম প ন স

অবরোহণ : স ন প হ্ম গ স

দেবক্রী : এই রাগে নিবন্ধিত গানের সংখ্যা ১টি। গানক্রম ৮।

আরোহণ : স র গ র গ ম প ধ ন স

অবরোহণ : স ন ধ প ম গ র স ন্ ধ্ ন্ স্

ধনসী : এই রাগে নিবন্ধিত গান সংখ্যা ১। পদক্রম ১৪। এই রাগের জাতি-ঔড়ব-সম্পূর্ণ। গীতকাল-সন্ধ্যা প্রহর।

আরোহণ : স জ্ঞ ম প ণ স

অবরোহণ : স ণ ধ প ম জ্ঞ র স

বঙ্গাল : এই রাগেও নিবন্ধিত গান সংখ্যা ১। পদক্রম ৪৩। এই রাগের জাতি-ষাড়ব। গীত কাল- দিবা প্রথম প্রহর।

আরোহণ : স ঋ গ ম প দ স

অবরোহণ : স দ প ম গ ম ঋ স

অরু : এই রাগে নিবন্ধিত গান সংখ্যা ১। পদক্রম ৪। এই রাগের জাতি-সম্পূর্ণ। গীতকাল- রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর।

আরোহণ : স র গ র গ ম প ন ধ ন স

অবরোহণ : স ণ ধ প ম প ধ ম গ র স

উল্লেখ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকটি রাগ গীতগোবিন্দেও পাওয়া যায়। রাগগুলোর মধ্যে চর্যাকারগণ বেশি ব্যবহার করেছেন পটমঞ্জরী ও গৌড় রাগ। পটমঞ্জরী রাগের উল্লেখ সেনযুগের হলায়ুধের ‘সেকশুভোদয়া’তে রয়েছে। সেই বিবরণ অনুযায়ী দাক্ষিণাত্যের বূঢ়ন মিশ্র সেনসভায় সংগীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় পটমঞ্জরী রাগ গেয়ে উদ্যানের সব গাছের পাতা একসঙ্গে ঝরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে জয়দেব বসন্ত রাগের আলাপ ধরেন। সমস্ত গাছে নবকিশলয় দেখা যায়। জয়দেব বিজয়ী হন। এই বিবরণ প্রায় চুরাশি মহাসিদ্ধদের রূপকাশ্রয়ী অলৌকিক কাহিনির মতো। সেক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনার কথা মনে হয়। এক একটি পদের জন্য এক একটি নির্দিষ্ট রাগ নির্ধারণের কি কোনো সাধনতাত্ত্বিক তাৎপর্য ছিল? রাগের ভাবকে সাধকের ভাবের সাথে সংযুক্ত করেই কি সাধনার অগ্রগতি হতো? খুব সম্ভবত তাই। হয়তো সেই কারণেই মধ্যযুগেও প্রথিতযশা সাধকদের সংগীত পরিবেশনের কাহিনিতে রহস্যময় অলৌকিকতার মধুর উপস্থিতি দেখতে পাওয় যায়।

গৌড় রাগের অগণিত রূপভেদ ছিল। কেদারগৌড় ও নারায়ণগৌড় নামেও দুটি রাগ প্রচলিত ছিল। গৌড় রাগ আজও ভারতীয় সংগীতের দুটি ধারায় খুব সমাদৃত। দাক্ষিণাত্যে ও পাঞ্জাবে। একটি আশ্চর্যজনক তথ্য হল শিখদের গুরুগ্রন্থসাহিবে ব্যবহৃত রাগগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত রাগ হল গৌড়। সেনযুগের সহজিয়া কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ শিখগুরুদের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। শিখ ধর্মগুরুদের সাধনদর্শনে মাতৃকা উপাসনার বিশেষ করে চণ্ডীর উপাসনার গভীর প্রভাব আছে। এঁদের পদগুলি শুনলে বোঝা যায় সহজযানীদের মতো এঁরাও কায়াসাধনা বা দেহতত্ত্ব সাধনা করতেন। গুরু নানকের সাথে অবধূত নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সংযোগ ছিল বলেও জানা যায়। কাজেই গৌড়বঙ্গের সাথে পাঞ্জাবের সাধনধারার সংযোগ অবশ্যই ছিল। সেক্ষেত্রে গৌড়বঙ্গের সংগীতের ধারার সর্বভারতীয় বিস্তারে এভাবে সিদ্ধাচার্য পরম্পরার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। সমসাময়িক সংগীত-পদ্ধতির একটি সংকেত চর্যাগীতে খুব সুস্পষ্ট। এই গীতগুলোর মূল পুঁথিতে এবং শাস্ত্রী-মহাশয়ের সংস্করণেও প্রতি পদের প্রত্যেক দুইলাইনের শেষে “ধ্রু” এই শব্দটির উল্লেখ আছে। “ধ্রু” যে ধ্রুবপদের সংকেত এতে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না। কয়েকটি পদের সংস্কৃত টীকাতেই ‘ধুবপদেন দৃঢ়ীকুৰ্বন’, ‘ধ্রুবপদেনছথ্বয়’ বলে উল্লেখ রয়েছে।

চর্যাপদে দুটি রাগের নাম শবরী ও কাহ্নু গুঞ্জরী। মহাসিদ্ধ শবরীপা ও কাহ্নুপার নামাঙ্কিত এই দুটি রাগ ইঙ্গিত করে চর্যাপদের রচয়িতারা শুধুই তত্ত্বের সাধনা করতেন না; সংগীতের সাধনাও বিলক্ষণ করতেন। আজ যেমন মিঁয়া তানসেনের নামে মল্লারের একটি বিশিষ্ট রূপকে মিঁয়া কি মল্লার বলা হয়; সম্ভবত সেভাবেই কাহ্নুপার দ্বারা উদ্ভাবিত এবং গুঞ্জরী রাগের একটি বিশিষ্ট রূপ ছিল কাহ্নু গুঞ্জরী।

এ পর্যায়ে অপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। চর্যাপদে দুটি রাগের নাম শবরী ও কাহ্নু গুঞ্জরী। মহাসিদ্ধ শবরীপা ও কাহ্নুপার নামাঙ্কিত এই দুটি রাগ ইঙ্গিত করে চর্যাপদের রচয়িতারা শুধুই তত্ত্বের সাধনা করতেন না; সংগীতের সাধনাও বিলক্ষণ করতেন। আজ যেমন মিঁয়া তানসেনের নামে মল্লারের একটি বিশিষ্ট রূপকে মিঁয়া কি মল্লার বলা হয়; সম্ভবত সেভাবেই কাহ্নুপার দ্বারা উদ্ভাবিত এবং গুঞ্জরী রাগের একটি বিশিষ্ট রূপ ছিল কাহ্নু গুঞ্জরী। গায়কী রীতি তাহলে কেমন চর্যাগানের? চর্যাগানের গায়কীর কোনো প্রকার দলিল নেই। তবে রাগের দলিল আছে৷ গায়কী হল চিরন্তন ভূমণ্ডলের নানারূপ বিকার, প্রকৃতির নানা শব্দকল্পদ্রুম। পথহারা, পথ-অনুসন্ধানী মানবের আকুতি, উপলব্ধি, আশা-হতাশা, আনন্দ-বেদনাজাত বিকারেরই নানা মাত্রিকতা হচ্ছে চর্যাগানের গায়কী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষভরা অনুষঙ্গ চর্যাগানের গায়কীর রূপ নয়। মাটির ও মাঠের উন্মুক্ত অবস্থার গলাছাড়া আবেগের সন্নিহিত রূপ এর গায়কী। প্রার্থনার নিবিষ্টতা, প্রাপ্তির হাতছানি, না অনুধাবনের কষ্ট, কখনো কখনো চর্যগানের গায়কীর চিরন্তন রূপ। এই চিরায়ত রূপকেই সামনে এনেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ । ধারণা নয় এই কথা হলফ করেই বলা যায় চর্যাপদ অর্থাৎ চর্যাগান ছিল সেই সময়ের সহজযানের তত্ত্বের গেয় রূপ। পথে প্রান্তরে বীণা, কচ্ছপী বীণা, একতারা সহযোগে সর্বসাধারণের কাছে সাধনতত্ত্বের সার উপলব্ধি সহজভাবে প্রকাশ করতেই এই গীতিসমূহ রচিত হয়েছিল। অর্থাত এই গীতিগুলি আজকের বাউলগীতিরই পর্যায়ভুক্ত,যার প্রতিটি গীতিতে বিশুদ্ধ রাগ রাগিণীর প্রয়োগ ঘটেছে। সংগীতের ধ্রুপদী রূপটিকে অক্ষুণ্ণ রেখেও কীভাবে তাকে সকলের রসাস্বাদনের উপযোগী করা যায় তার সার্থক দৃষ্টান্ত এই পদগুলো। সিদ্ধাচার্যগণ সংগীতসাধনার কোন উচ্চতায় আরোহণ করেছিলেন তা বিলক্ষণ বোঝা যায় এই রাগগুলো থেকে।

চর্যাগীতির পদগুলি সিদ্ধাচার্যদের সেই সময়েই যে রাগভিত্তিক সুরে এবং তালে গাওয়া হত তা গীতারম্ভে রাগের নামেই প্রমাণ, সুতরাং প্রথমত এগুলো গান, তার নিজস্ব স্বরলিপি রয়েছে, কাঠামো রয়েছে। এই রাগভিত্তিক স্বরলিপির ওপর সওয়ার হয়েই আলীম মাহমুদ নির্মাণ করেছেন এই সুর, চর্যাগানের সুর। এই চর্যাগানের সুর বিনির্মাণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া আজও একধরনের রহস্য হয়তো তাদের কাছে যারা শাস্ত্রীয় সংগীতের রাগ এবং সুর-রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞাত কেননা এ-সব রাগের ঠাট্ট বা কাঠামো যে কী ছিল, এখন আর তা বলা দুঃসাধ্য ছিল এতদিন তবে অসম্ভব ছিল না। ধারণা করা হয় এগুলো সমসাময়িক লোচনা-পণ্ডিতের রাগীতরঙ্গিনীর বা কিছু পরবর্তীকালের শার্ঙ্গদেবের সংগীত-রত্নাকরের (১২১০-১২৪৭) পদ্ধতি অনুযায়ী গাওয়া হত। চর্যাগানের সাড়ে ৪৭টি গীত-ই হয়তো সেই-সব রাগে গাওয়া হইত।

বঙ্গাল রাগও যে কী ধরনের রাগ আজ আর তা কিছুতেই বোঝার উপায় হতো না যদি চর্চা গানের রাগ ভিত্তিক সুরারোপ না হত যা করেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ স্বয়ং। তবে এই রাগটিও যে এক সময় গুর্জরী, মালবস্ত্রী বা মালসী, শবরী প্রভৃতি রাগের মতো স্থানীয় লোকায়ত রাগ ছিল, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই।

গবড়া ও গউড়া একই রাগ এ বিষয়ে সন্দেহ নাই । আবার গৌড়ীরীতি রাগের মধ্যেও তেমনই একটি ছিল গউড়া বা গৌড়ী রাগ এবং তাহারই সঙ্গে মালসী বা মালশ্রী (মালব-শ্ৰী?) মিশাইয়া যে মিশ্র রাগ তাহার নাম মালসী-গবুড়া (৪০)। লোচনা-পণ্ডিত কিন্তু এক গৌরী-রাগের নাম করেছেন; গৌরী কি গৌড়ী-রাগ? গুঞ্জরী গুর্জরী-রাগেরই লিপিকর প্রমাদ এবং কাহ্ন-গুর্জরী গুর্জর-রাগেরই বিশেষ এক প্রকার মিশ্রিত রূপ; অসম্ভব নয়, মাৰ্গ গুর্জরীর সঙ্গে দেশী কাহ্ন-রাগের মিশ্রণেই কাহ্ন-গুর্জরীর সৃষ্টি। কাহ্ন বা কৃষ্ণভক্তরা যে ঠাটে গুর্জরী রাগ গাহিতেন তাহাই কি কাহ্নগুর্জরী? বা মথুরা-বৃন্দাবনের কৃষ্ণলীলার প্রচলিত গুর্জরীরাই কাহ্নগুৰ্জরী? রামক্রী-রাগ নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের রামকেলি, গীতগোবিন্দের রামকিরী, শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তনের রামগিরি রাগ। কিন্তু দেবক্রীর পরবর্তী ভগ্নরূপ দেবকিরী-দেবকেলি বা দেবগিরি এমন কোনো কথার উল্লেখ পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে সংগীত-শাস্ত্ৰে বিভিন্ন ঘরানায় দেবক্রীরাগের কোনো আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়নি। অপরদিকে দেশাখ রাগ নিঃসন্দেহে গীতগোবিন্দ ও শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তনের দেশাখ; কিন্তু দেশাখ কি দেশাখ্য রাগ? অর্থাৎ কোনও দেশি রাগের মার্গীকরণ? পরবর্তী (শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন) কালের ধানুষী এবং মল্লারী সুপরিচিত মল্লার। কিন্তু সংগীত-ইতিহাসের দিকে তাকালে চর্যাগানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য রাগ শবরী এবং বঙ্গাল রাগ। এই রাগ নিঃসন্দেহে শবরদের মধ্যে প্রচলিত রাগ। এই লোকায়ত রাগটির মার্গীকরণ কবে হয়েছিল, বলা কঠিন, কেবল চর্চা গান ছাড়া আর কোথাও এই রাগের তেমন উল্লেখ খুঁজে পাওয়া যায় না। বঙ্গাল রাগও যে কী ধরনের রাগ আজ আর তা কিছুতেই বোঝার উপায় হতো না যদি চর্চা গানের রাগ ভিত্তিক সুরারোপ না হত যা করেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ স্বয়ং। তবে এই রাগটিও যে এক সময় গুর্জরী, মালবস্ত্রী বা মালসী, শবরী প্রভৃতি রাগের মতো স্থানীয় লোকায়ত রাগ ছিল, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। ভারতীয় মার্গ-সংগীতে বঙ্গাল-রাগ এক সময় সুপরিচিত রাগ ছিল এবং অষ্টাদশ শতকের রাজস্থানী চিত্রনির্দেশে বঙ্গাল-রাগের চিত্রও দুর্লভ নয়! পরবর্তীকালে কখন কী ভাবে যে এই রাগটি লুপ্ত হয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে গেল তা আজও রহস্য হয়েই রয়েছে। সত্যি ও সহজ করে বললে চর্যাগানের দেবক্ৰী, গউড়া বা গবুড়া, মালসী-গবুড়া, শবরী, বঙ্গাল, কাহ্নগুৰ্জরী প্রভৃতি অনেক রাগই আজ বিলুপ্ত মনে হলেও তা সত্যি নয় কেননা রাগ মিশে থাকে প্রকৃতিতে, সুরে। দেশাখ রাগও হয়তো আজকের সময়ে দেশ-রাগে রূপান্তরিত হয়েছে। চর্যাগানের সত্যিকারের রাগগুলোর রূপ কেমন তা আজ বোঝার উপায় থাকত না যদি আলীম মাহমুদ তাঁর একাগ্র সাধনায় এই অসম্ভবটিকে সম্ভব না করতেন। চর্যাপদের প্রতিটি পদের শিরোনামে উল্লিখিত রাগ সরিয়ে নিলে তার শিল্প ও সংগীতমূল্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়। যেহেতু প্রাচীন এই মহাগ্রন্থেও প্রতিটি পদের শিরোনামে রাগ উল্লেখ রয়েছে সুতরাং চর্যাপদের গীতরূপ রাগভিত্তিক হওয়া সমুচিত এবং এটিই শাস্ত্রীয় বিধিসম্মত রূপ। সংগীতের তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, শাস্ত্রের বিধি মেনে, রাগ অক্ষুণ রেখে এই কাজটিই আলীম মাহমুদ শুরু করেছিলেন চর্যাপদ গ্রন্থ-আকারে প্রকাশের ৭৫ বছর পর যা সমাপ্তও হয়েছে সফলভাবে। রাগভিত্তিক নিরীক্ষণীয় এই সংগীতায়োজন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের, যে কোনো জনগোষ্ঠীর মগজে এবং হৃদয়কে আন্দোলিত করতে এবং মার্গীয় সংগীতের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম।

চর্যাগান শিল্পীত সংগীত, এটি নির্জলা সত্য। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে সোমপুর মহাবিহারের বৌদ্ধসহজিয়া সিদ্ধাচার্যগণের রচিত গীতিকাব্যের শ্রেষ্ঠ সংকলন এই মহাগ্রন্থ। ১৯০৭ সালে আবিষ্কার এবং ১৯১৬ সালে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়ে সর্বপ্রথম বিদ্বদজনের নজরে আসে এই পুঁথি। সুতরাং একশ বছরে চর্যাপদ প্রকাশোত্তর চর্যাগান বিষয়ক সর্বশেষ সুসংবাদ হলো সুরারোপিত চর্যাগান। বাংলা ভাষাকে আদিপরিচয় পাইয়ে দিয়ে প্রথম শিরোমণি হয়েছিলেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদশাস্ত্রী, পরবর্তী পর্যায়ে সেটিকে ইংরেজি ভাষায় ভাষান্তর এবং বাংলায় আধুনিকায়ন করার গৌরব অর্জন করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সর্বশেষ রয়ে গিয়েছিল সংগীতে সঠিক রাগভিত্তিক সুরারোপ এবং গীতরূপ দেওয়া। সেই কাজটিই করেছেন চর্যাযোগী আলীম মাহমুদ। এর মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রাচীন সোমপুর বিহার এবং বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের আরো একবার আশীর্বাদ পাইয়ে দিলেন আলীম মাহমুদ। বাংলা ভাষা ও বাংলা সংগীত নিয়ে সবচেয়ে ঋদ্ধ এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের সর্বাপেক্ষা উচ্চাঙ্গের কাজটি করেছেন তিনি। আচার্য অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, তেইশজন পদকর্তা এবং সোমপুর বিহারের আশীর্বাদপুষ্ট এই সুর, সংগীতায়োজন এবং গায়কী বিশ্ব-সংগীতের এক কালোত্তীর্ণ সংযোজন, বাংলা সংগীতের এক অমৃত-অমিয়ভাণ্ড।

লেখাটি শেয়ার করুন :

এমরান হাসান

এমরান হাসান। জন্ম : ১৩ নভেম্বর ১৯৮৭, টাঙ্গাইল। কবি, প্রাবন্ধিক। গবেষণা করছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদিমাতা চর্যাগান-এর সুর এবং লালন সাঁইজির বাণী ও দর্শন নিয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা (২০২১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!